“ঘোড়াটা থামবে না। সওয়ারীর চারপাশ ঝাপসা। পায়ের নীচে জমি আর মাথার উপরে আকাশও ছুটছিল। রেকাব আঁকড়ে এই বসে থাকা ছাড়া তার গত্যন্তর নেই। দেশকাল পার হয়ে যাচ্ছিল ঘোড়া। খুরে খুরে উড়ে যাচ্ছিল থামার ইচ্ছে। ইচ্ছে নেই তবু ঘোড়ার পিঠে পেরিয়ে যেতে হচ্ছে যা কিছু ভালবাসা। হায়, সে থামিতে পারে না! এমন দ্রুতির সঙ্গে তার ঘর বাঁধা হয়ে গ্যাছে। অনন্তকাল অশ্বখুরের ধুলোয় এইভাবে উড়ে যাবে সাধ।”
এই অব্দি বলে কথক থামলো। সভা থেকে উঠে একটি বালক বেরিয়ে যাচ্ছে। মন্ত্রার্পিতের মতন বসে থাকা সমষ্টি থেকে বালকটি উঠে যাচ্ছে। দৈব বিপর্যয়ের গপ্পের মধ্যে যে অমোঘ ভয় তা শ্রোতাদের পা গুলো ভারী করে রেখেছে। চোখের পাতাতেও তাদের মাখানো থাকে ভয়ের কাজল। পল্লব ভারী হয়ে আসে। হাঁ হয়ে যায় মুখ। প্রতিটি পেশী টান করে তারা শুনে গ্যাছে ঘোড়সওয়ারের অসহায়তার গল্প। বালক তবে কেন উঠে যায়?
কথক-ও উঠে দাঁড়িয়ে জানতে চায়। কথকের ঘোড়াটিও সায় দেয় জিজ্ঞাসায়।
ঘোড়ানিমগাছের ডালে বসা ফালি চাঁদ লন্ঠনকে চোখ মারে।
এবারে বিশেষ মজা হবে, এবারে বিশেষ মজা হবে বলে উড়ে যায় রাতচরা দিগন্তের দিকে। ওইখানে কিছু পোকা পাওয়া যাবে এমন শুনেছে সে বাতাসের কাছে।
বালক, ঘুণষিতে লাগানো মাদুলি ঘোরাতে ঘোরাতে লেত্তির মত জিজ্ঞাসায় ছুঁড়ে দ্যায় অবহেলার লাট্টুঃ
“হাতের লাগাম টানলেই থেমে যেত ঘোড়া।”
এইবারে বিশেষ মজা হবে, এইবারে বিশেষ মজা হবে বলে ঘোর কৌতুকী চাঁদ আকাশে বন্ধ করে মেঘের দরোজা।
আর অন্ধকার গল্পটি গিলে নিয়ে বসে থাকে চুপ, যেন এক পবিত্র ময়াল।