রাণুর জন্য যে সব লিখিনি
_____________
১
স্তব্ধ হওয়ার আগে পেন্সিল মুহুর্ত
দরজা পেরিয়ে ল্যাটারাল স্ট্রোক,
লিখিত শব্দগুলো পর্বান্তরে
কেমন মেঘ করে উঠলো
বারোটা একচল্লিশের আকাশে
যাও রাণু, এখানে অন্ধকার
বৈদ্যবাটি অন্য কোনো গ্রহ
২
বেগুণ ভাজতে যে ব্যবস্থাপনা
সমসাময়িক শিল্পে প্রতিদিন দেখি
ভয় পাই, ভগ্ন হয়ে যাই-
পুকুরের ধার থেকে যা হোক
শাক, পাতা, ফুল, মূল
সেদ্ধ, ভাজা বা পোড়ানো
বন্ধ হয়ে গিয়েছে
আমি বাঙাল রাণু
দারিদ্র থেকে দূরে যেতে
অস্বস্তি বোধ করি
৩
বিরতির পর
ছোটবেলা খুলে যাবে,
বৈদুর্য্য মণির মতন
ডাল থেকে নদীতে ঝাঁপাবার
অহঙ্কার ফুটবে শরীরে
তার গ্রীবায় হাত রাখো
বিদ্যুৎপ্রবাহ টান
এ ঘোড়া অশ্বমেধে যাবে
ঐ ঘোড়া কুয়োতলা সন্তাপ
তোমার বেলেল্লাপনায়
রক্তে ভাসবে
বিরতির পর
কী ঘৃণ্য রাণু দ্বিতীয় অঙ্কে!
___________________
ছিল যে
____
প্রেমের কবিতা লিখবো না বলে
সাদা এলাকায় প্রথমেই লিখে দিলাম
নেই
এরপরে ছয়, সাত…,
ছত্রিশ সেকেন্ড-
নেই
মুছে দিলে সাদা হবে
সাদা মানেই সব রঙ
কেটে দিলে আভাসে থাকবে
তলায়
নেই-এর থেকে চোখ তুলতেই পারছি না
না চেয়েও ছিল-র কথা যে অনুষঙ্গে
_________________________
অনেকটা আমার মতন
____________
বৃষ্টি আসবে বলে লাল পিঁপড়েদের লাইন
হারাতে গেলে থাকতে হয়,
ছিল না তাই হারায়নি-
অতএব থানা পুলিশ বাদ
মৌজ-মস্তি-উল্লাস
বৃষ্টি আসেনি বলে মদের দোকানে লাইন
অনেকটা আমার মতন এ সমস্ত
__________________
তেতো খেলে
______
কেউ একটা বলে যাক
বেশীক্ষণ রোদে থেকো না
এ জন্যই কবিতা লেখা,
কেউ চলে যেতে যেতে বলে
পুড়ে যাও একাকী দহনে-
মা বলে নিমপাতাভাজা খা
তেতো খেলে স্বাস্থ্য থাকে
_______________
এবার ওকে সত্য করে দাও
_____________
যেভাবে ঈশ্বরী গাইতেন সেভাবেই বৃষ্টি নামে
চল্লিশ পাতা জুড়ে জমানো রোদ উড়ে যায়
হাঁটু কাঁপে, এ কী কষ্ট প্রভু এ দিক-দিগরে-
সইতে পারি না, ওকে মিথ্যে করে দাও;
মানুষে মানুষ খায় অর্জন শূন্য করে
শূন্যের ভেতরে অক্ষৌহিণী বিন্দুবত্
শোকসভা হলে ডালের স্রোতে ডোবে
থোকা থোকা ফুলকো ভাতের বর্ণনা,
দিন-ভোর বৃষ্টি-প্রসন্নতা চেয়ে উপবাস
হাঁটু কাঁপে, রোদের ত্রাসে বেপথু রাস্তায়
গাইবেন ঈশ্বরী বলে কষ্ট দিচ্ছ এ কেমন
দাও অন্তত এবার ওকে সত্য করে দাও!
________________________
আবডালে
_____
আঙুল পুড়িয়েছি শান্ত ভোরের চুলে আচমকা ডুবিয়ে
যে শব্দেরা এল ইদানীং পারি না আসন দিতে
ছবি সব তবু কী আড়ালে বাড়ে না,
নাই বা অক্ষরে লিখি
আবডালে সে সব-ও কী লিখিত হল না!
কাল হাত খসে গেলে বলবো বিদায়
লেখা যাকে সেধেছে সূর্যাস্তেও
দিন গেলে সেও চলে যায়।
ব্রীজ
___
একবার একটা ব্রীজ পেরোতে
ভাবনাটাকে পেরিয়ে গেলাম;
বারোটা চুয়াল্লিশ তখন
যদিও সেটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না,
অথচ ঠিক কী গুরুত্বের ছিল এখন তা
বোধহয় নদীটাই গুরুতর ছিল
অথবা পেরোনোর আকাঙ্খা,
যে নাম নিয়ে ব্রীজে উঠেছিলাম
কিছুটা গিয়ে সে আর রইলো না
সর্বনাম হয়ে যাচ্ছিলাম
সবাই পেরোতে চেয়েছিল ব্রীজ
কোনো উচ্চাশা ছিল না
শুধু নিজেকে পেরোতে চেয়েছি
________________
ভুল
___
একটি নক্ষত্র শুধু সযত্ন লালিত ভুলে
ডুবে গেল বিনা মেঘে সমুদ্র উপকূলে
____________________
ভাষার যমজ যে
_________
১
একটি অল্প বয়সী গাধা স্তব্ধ প্রান্তরে গান গেয়েছিল
ভাষার তুমুল মাদুর বুনে পন্ডিত প্রাজ্ঞ মোড়ায়
গাধার বিপ্রতীপে রেখেছিল প্রতিভা সে ঘোড়াটির
যার দৌড় বহুদূর গেছে অতীতে ও ভবিষ্যৎ-এ
গাধা শুধু গানে আর চাঁদে জানে যতটি সম্পর্ক
বাকী সব লৌকিক বোঝা বলে জেনেছে একদা
২
পড়োশীর ছায়া যেই আহত রাক্ষসে পড়েছিল
তার বাড়ি ঈশ্বরদি, যাতায়াতে স্থানীয় লোকাল
খেতে চেয়েছিল শহর, নখে বিঁধে ধারালো সময়
ইচ্ছে পড়োশীর চেয়ে যেন তার বাড়ি বড় হয়
একদিন খেয়ে গেল উচ্চাশা তাহাকে রাতারাতি
স্টেশনে না থামলেও থামাবেই ট্রেন লাল বাতি
৩
আয়নার ভেতরে থাকা চাট্টিখানি না
এর পেছনে ওকে, ওর পেছনে তাকে
আলো জ্বেলে-টেলে ভালোবাসিটাসি বলে
আয়নার মধ্যে ঢুকে গেলে তো গেলেই,
রোদ বাড়লেই তোমার অস্থিরতা বাড়ে
সমুদ্রজলের নুন ত্বকের পক্ষে ক্ষতিকর
র্যাশ হয় ভাবনার উপরিতলে লালচে
ভেতর থেকে কিচ্ছু দেখতে পাও না-
বুঝি, চোখ ঝলসে যায় আয়নার ভেতর
আমার বাইরে হাওয়া, কালো হওয়া
গায়ে লাগে না লু-বৃষ্টি-কুয়াশা কোনোটা
আয়নার বাইরে থাকি নিজেকে দেখতে।
_______________________
তেমাথা ভূতের বাড়ি
___________
১
স্বপ্ন ভাঙছে যেই মহানগরের মোড়ে
সাঁই করে হানা দেয় ভৌতিক বাড়ি,
দরজাময় হাওয়াদের ভর হয় দীর্ঘ
ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে সারাদিন কাটায়
খুনে কুকুর, অন্য কাউকে ঢুকতে দেবে না
ছায়াময় জানলায় আঁকা
কিউবিস্ট অতীত –
পাড়াময় ভিডিও লাইব্রেরী
যে যার নিজন্ত ভয় তাক থেকে পেড়ে
খেলা করে কম্পিউটার জুড়ে
রাত বাড়ে, ভবিষ্যৎ বাড়ে না
২
আমার দৈর্ঘ্যের চেয়ে বেড়ে গেল কড়ে আঙুল
আড়ি হয়ে গেল আলোছায়া মাখা
এবারে বাড়ির পথ বল
কেউ বলে দাও সাকিন ঠিকানা!
আমি তো পাইনি ট্রামের জীবন
সোজা লাইনের নির্ঝঞ্ঝাট-
আঁকাবাঁকা কংসাবতীর ছেলে
শুকোনো ঋতুর ভাই
শুনছেন, শুধু এলেবেলে
ইদানীং ভূত হয়ে থাকি
৩
জেঠিমার মেয়ে
জেঠুকে খেয়ে
পড়াশোনা না করে ঘর পালিয়ে
তিনটে বিয়ে দুটো বাচ্চা করে
একটাকে শিলিগুড়ি ফেলে
ধাঁ-
ফিরে পৈত্রিক বাড়ি পেতে
জেঠিমাকে টেনে-হিঁচড়ে
দিল্লী নিয়ে, সব লিখিয়ে
মেরে, খিস্তি করে
খেতে পড়তে দিতেও আপত্তি,
ক্যান্সার হয়েছে বলে
হোমিওপ্যাথি করায়-
কবিতা-ফবিতা ভাঁড় মে
গলায় পা দিলে শান্তি;
অথচ আমার তো কেউ না
শব্দ দিয়ে সম্পর্ক মাত্র
রক্ত ছিটে ফোঁটাও নেই,
সাদা পাতা আবার কেউ পড়তে পারে না
না পুলিশ, না তুমি, না সংসারের হাঁ-মুখ
আমি আর জেঠিমা একটা সাদা পাতা
আমরা দুজনে একটা ভূতের গল্প
লেখা আছি, কেউ দেখতে পায় না
______________________
বাগান
____
একটা বাগান ফোটাও শূন্যতা
কষ্টে বুক ফেটে যায়
পাখিদের মনস্তাপ অসীম
ওরা তো দোষ করেনি কেউ
আমার পরিযায়ী ডানা
আগুনের অর্কেস্ট্রা
___________
অভিশাপ
_____
অভিশাপ দিলাম
আমাকে কষ্ট দিয়েছো যেমন
তোমাকেও লাল পিঁপড়ে কামড়াবে
নীচের ঠোঁটের ফোলাটায়
যেখানে ভ্রমর ভুলে
আমার আঙুল হয়েছিল
_______________
যেভাবে বাদাম উঠে এসেছে দুই আঙুলের নিষপিশে
_________________________
১
বিরোধীতা মানে এক চমৎকার রান্নাঘর
যার পা পর্যন্ত চুল, গোড়ালি ঢেকে যায় ভুলে
রাঙাজবা হয়ে থুতনির ক্যালেন্ডার-
তিল টাঙানো দিন ক্ষণ মাসের মত নিখুঁত
এদিকে গণনা মানে কাটা ফলের দোকান
তামসিক স্বভাবের ডাইরঙা টুঙলা ব্রীজ
পাহাড়ে পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতার কাহিনী
দুটি স্তনে যা কখনোই ছিল না,
এ পর্যন্ত ছত্রিশবার কালিঝোরা গিয়েছি
ফিরেছি বাহান্নটি আলাদা পীঠে,
তবু কেউ কখনো ভুল স্বীকার করেনি
২
মাঠভর্তি হয়ে আছে উড়ন্ত বাদামের উত্তেজনা
মেলার কাহিনী থেকে যারা এসেছিল বিকেলে
এখন বৃষ্টির অপেক্ষায় তারা যদিও পাঁশুটে
এই যেমন ধর্মঘট, ঐ যেমন গুলি চলা-
বুঝতে পারছো নিশ্চই কেমন করে রামধনু
আঁকতে বাঁকতে উড়ালপুল দুদিকে নোঙর
মিথ্যে হয়ে সত্যি হয়ে বিতত অভিজ্ঞান
আসমানিয়ানা আমাদের বিলাসিতা মাত্র,
তোমার দেওয়া ক্ষত বুকপকেটে যত্নে
হারিয়ে গেলে আর কীই বা থাকবে…