অ্যালবাম
_____
মা স্নান করাচ্ছে বোনকে লাল টবে
ভঙ্গীমার থেকে নিপুণ উঠোন বসার
আড় ভেঙে বেড়ালের মত অতীতে
বোন গেল, মা-ও দাঁত বিহীন মাড়িতে-
সাইকেলের ঘন্টিতে ঘন্টিতে বেজে
বাবা চাকরী, বদলি, ইস্কিমিক হার্ট;
গ্রীষ্মে যখনই জানলা খুলেছি
প্যান্ট ইস্ত্রি করেছি
চুল আঁচড়েছি বাজার বিষয়ক
মা ফর্দ এনেছে, বাবা ঘেমেছে
বোন দরজা বন্ধ,
অনেকবার ভেবেছি বর্ষায় ফিরে যাব
লতার মতন নেবো শরীরে সব
গাছ হব হে সংসার
দরদালানে ছায়া দেব সুরভিত-
সে সব গল্পের ঠোঙায় এখন
অ্যালবাম পরে আছে দু চারটে…
সাইকেল
_____
ঝাউ-এর বন উঠে আসছে সমুদ্র ভেঙে
যেখানে যাচ্ছি সেখানেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে,
এ সব অশরীরি জীবন আমাকে মানায়
ভয়ের যে নামডাক অসামাজিক
সে আমার যমজ বলতে পারো
অথবা ছদ্মনাম-ও,
উলের বল গড়াতে গড়াতে বেলাভূমি
ঠিক্রে লাল হয়ে যখন কালচে ঝড়
সুতো, সম্পর্ক, সংসার বুনে
বুনতে চেয়ে নকশিলী
তোমার চোখে উড়ন্ত বালি
ঝাউবন সিক্সথ সিম্ফোনিটি
প্যাস্টোরাল ঘটিয়ে,
উন্মত্ত মাথা দুলিয়ে
ল্যাটারাল শটে অতিক্রম করছে
আমাকে তোমাকে বিষুবরেখা-
তোমার স্তনে মুখ রাখছি
প্রথমবার, দীর্ঘ ছায়ার মত
সন্তান হয়ে, সন্তান চেয়ে
বন্টন রেশনের দোকানের তুচ্ছতা
এই দেখো এই নগ্ন,
এই সুন্দর, এই কুৎসিত
ম্লান ও উদ্ধত সাবেকী বৈপরীত্য
শুদ্ধতা ও অসম্ভব গরিমা প্রিয়তমা
আমাদেরই সাইকেল বলে…
মদ
__
১
মদের ওপাশ থেকে মাতলামি
কাঁচের পাত্রে গোলাপের ধারাবাহিক
জলের দরজা সকল বাড়িতে বাড়িতে
মাছের, আঁশের গেরস্থালি
বর্ষার সোঁতা শীতের নেই নেই সখা-
ও চকোর, ও ধৃষ্ট
মদ, আমার না লেখা সমস্ত চিঠি
২
পিরিতি সিলিন্ড্রিক্যাল বোতল
চিমনীর মতন ঠেলে উঠেছে
আকাশ,
ফুঁড়ে উঠেছে মহাস্থান
আবিশ্ব ওকে মদ বলে ডাকে
রাত্রে আমিই শুধু জার্সি বদলাতে দেখি
৩
এপারে পদ্মা ওপারে পদ্মা
কানকোর লাল ইলিশ
মধ্যিখানে দেব সাহিত্য কুটীর
ছোটোবেলা, কিশোরীর মৃদু স্তন
যে রুমালে গিঁট বাঁধা ছিল
জুয়ার আড্ডা তাকে খুঁজে দেখা যাক
মদের বোতল কিছু আলো দিতে পারো?
৪
প্রেমিকাদের বলছি আমি অবিশ্বস্ত
ভাল মানুষের ড্রেস কোনোদিন
এস্প্ল্যানেডের টেলর
মাপে মাপে পড়াতে পারেনি
মদ খেলে সব মনে পড়ে না
লা খেলে সব ভোলার দোষ-ও করিনি
প্রতিটি বিশ্বাসঘাতকতা
তোমাদের ছোট গল্প
আমার এক একটি উপন্যাস
শিশুটিকে কবিতা স্নান করাবো মদে
৫
সারা সন্ধে বাতাসার কথা ভেবেছি!
বড়-মা এসেছিল
মাথায় হাত বুলিয়ে ফিরে গিয়েছে
ওদের ভূতের বাড়িতে
আটটায় আলো নিভে যায়,
তুমি ফোনে কোনোদিন ততটা ভালও বাসোনি
যাতে সন্ধা না আসতে পারে
যাতে মদের গেলাস রাত্রে বিরক্ত না করে
আলো জ্বালো আলো জ্বালো বলে
সমস্ত তছরূপের দায় একাই নিয়েছি
৬
“ন মত্তে চৈব নোন্মত্তে ন স্তেনে ন চ কুৎসকে।
ন বাগ্ঘীনে বিবর্ণে বা নাঙ্গহীনে ন বামনে।।”
– মহাভারত, শান্তিপর্ব
‘মত্ত, উন্মত্ত, চৌর, পরনিন্দাকারী, মূক, বিকৃত বর্ণ, অঙ্গবিহীন, অতি খর্ব্ব, খল, দুষ্কুল জাত, অনুপনীত, তপস্যা বিহীন ও শ্রোত্রিয় ভিন্ন অন্য ব্যক্তিকে দান করিবে না।’
উল্লাসের পরেও সব দরজা খোলে না,
দেখেছি অপেক্ষা উচ্চতা কমিয়ে দেয়,
ক্লাসে ক্লাসে পালিতে, শিলালিপিতে
অজস্র বেড়াতে যাওয়া বাতিল
সকলেই যুদ্ধে চলে গেছে;
অনুশাসনের আগে শান্তিপর্ব!
মত্ত, উন্মত্ত, চোর, পরশ্রীকাতর
মূক, বিকৃত বর্ণ, অঙ্গবিহীন, বাঁটকুল
বজ্জাত, বেজন্মা, উদ্দেশ্যবিহীন
কাক, কোকিল, ধর্মগুরু
এঁরা প্রকৃতই শ্রদ্ধাভাজন
যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে
ফিরে আসেন নগরে
গ্রামে গ্রামে আড়চোখে চাষাবাদ
দলের না হলে পুকুরে বিষ
আমি এঁদের শ্রদ্ধা করি
এঁরা মদকে শ্রদ্ধা করেন
আমরা মদের দেশে আমাদের
লেট নাইট গান-বাজনা করি…
৭
খয়েরী আলোর দেশে তরল মিথ্যে
একে এইটুকু দেয়, একবার ওকে
সকলকে ভালবাসা বলে চোখ টেপে,
চিরদিন এক্সাইজ খাতা
টানা টানা লাইনে
অভ্যস্ত অক্ষরে
টুকে রাখে মদের নামগুলো-
কোনটা খেলে কাকে বেশী মনে পরে
কাকে বেশী ঘেণ্ণা লাগে
৮
টিউলিপ ফুলের মতন কোমর
স্বল্প হাওয়ায় ভাসা বেলুনের মতন
যত্ন করে নাড়াও-
এত ধীরে ভাঙো কোমর
যাতে স্থির হয়ে সাধ মেটাতে পারি
দৃশ্যসুখ হয় উত্তেজনার
জিভের আড় ভাঙার থেকেও ধীরে,
তোমার বাড়িতে সন্ধাটি নীল যখন
আমাকে দেখতে দাও স্লো মোশন,
জমে থোকা পচতে শুরু করা বৃক্ষগন্ধ
এই যোনীতে রমণের আগে,
যে জাহাজী নোনা স্বাদ স্তনের স্বেদে
পূর্বরাগের একটু পরেই,
বৃন্ত যেমন চেরী বা অ্যাপ্রিকট
জিভের গভীরে গেলে মধু জিভে
আর গোটা শরীর ঝিম ধরা ওকের গন্ধ
তোমাকে গ্রাস করবো আনখ, করবোই
একমাত্র উপনিবেশের মূর্খ শুধু
সিঙ্গল-মল্ট সিঙ্গল মল্ট করে লাফায়
ব্লেন্ড জানে না, কাঁচা পয়সার গাধা
স্কচের মর্ম শুধু দাম দিয়ে বোঝে-
৯
এই যে জলে ভেজালাম এতক্ষণ
জিভের থেকে এনজাইমের জারণ
তোমাকে ভাঙলো যেই
শিথিল উদলা ভাতের মতন
সাদা, দানায় দানায় ছড়িয়ে
স্বেদাক্ত, উঠে যাবে বিছানা থেকে
স্নানে যাবে ঘোর চুলগুলো নিয়ে
যা কিছু কপালে, কপোলে
চূর্ণ, অস্থির ও শান্ত
মাটির নীচে শর্করা ভাঙে
যে স্বভাবে নদী ভাঙে পাড়
চিনি আলাদা করে চিন্তামণি
আলগা করে তুলেছি
তুমিও কী সটান ছিলে
কাদার মতন মাখার আগে
দু হাতে কঠিন ছিলে ধান
খোসার ভেতরে ফুঁসছিলে
আমন, আউশ কত-
এবারে শরীর রস সেঁধিয়ে গেঁজিয়ে
চোলাই-এর টকটকে নেশা
এ রাত্রে ধরিত্রী হলে
আতুর উন্মত্ত হয়ে
জিভে, কোষে খেয়েছি,
খুঁড়েছি সন্তানের মা
আজ রাত্রে কিছুতেই ফিরবো না!
১০
“This was when she asked him whether it was true that love conquered all, as the songs said. ‘It is true’, he replied, ‘but you would do well not to believe it.”
― Gabriel García Márquez, Of Love and Other Demons
কাঁচের গ্লাসটা ভেঙে ফেলো
অনেকগুলো প্রতিবিম্ব হবে
তারা বড়লোক হবে
মিথ্যে বলবে
ফূর্তি করবে
একে না পেলে
ওকে বলবে
তুমি ছাড়া বাঁচবো না-
দৈত্যটা বড় হতে হতে
অতীত খাবে
ভবিষ্যৎ খাবে
কোণা থেকে লুকিয়ে বেরিয়ে
খাবে আচার
চানাচুর আর রম্
রাস্তায় লাফাঙ্গা হবে
ইয়ারদোস্ত নিয়ে হল্লাচেল্লা
গান গাইবে ঝুঠা মোহব্বতের
এ কবিকে বলবে ওর থেকে ভাল
লিখে দাও দেখি,
ও কবিকে বলবে বোঝাও কেদ্দানি,
প্রতিযোগীতা লাগিয়ে রাখবে অসুখের
একে বলবে বেড়াতে চল
ওকে বলবে মদ খাওয়াও
মুখের দিকে কেউ কারো তাকাবে না
সবাই হিংসে করবে
মেয়েটা হাত পোড়াবে বাঁচা গালতে
দৈত্য তামাশা পর্যবেক্ষক
যাও গানের অপেক্ষা কর
অনেক মিউজিক ভিডিও পেরিয়ে
কেউ একদিন গাইবে
তদ্দিন বিশ্বাস করে মর
প্রেমের গান পৃথিবীতে থাকতো
লেবেলে মদের বোতলের
একমাত্র অর্থ জানতো সাকি
ও মরুভূমির মাঝরাতের তারারা
এবং আমি স্টেশনে কাউকে ছাড়তে যাই না
চৌকাঠ
____
ওদেশ থেকে এসেছে বলেই
লন্ঠন চৌকাঠে রাখবে
এ ভদ্রতা, কোথায় পেলে?
ঘরের আধখানা আলোয় ঘর
বাইরে আধখানাতে বাহির যৎসামান্য
পার্থক্য লতাটি সুকৌশলে বাড়ে
যেমন ফ্যাসিবাদ,
উপমা দিলে সেকেলে
বিকেলে হলে বেড়াতে যাওয়া-কাল
এগুলো অভ্যাস
ধরে নেওয়া
আমি থাকছিই যেমন – তেমন,
কড়ে আঙুলের অবাধ্যতা
লোককথায় আছে
পড়োনি বোঝাই যাচ্ছে-
এই যে চলে যাব আজ বাদে কাল
কি করবে বলো
যদি কষ্ট ফিরিয়ে দিই গুণে?
পেতে চাইলে দিতেও হবে
ঘরে এসো বা বাইরে চলে যাও
আটকে রাখিনি কিছুই
অবস্থা বুঝে নেবো
এই যে আরো গণহত্যা হবে
বুঝেছি বলে
ঘরেই ফিরিনা আর
তুমি ফ্যাসিস্ট হলে
থোড়ি না ভোট খেলতে যাব!
মাতাল
____
জোছ্না হব জোছ্না খাব আকন্ঠ চিৎকারে
বাড়ির মধ্যে বাড়ি করে মধ্যবিত্ত পাড়ায়
আঙুল দিয়ে শব্দ ছোঁড়ে অথচ কী শূন্য পরে
কে এক মাতাল, রাতে মোড়ের মাথায় দাঁড়ায়;
হরিণ যেমন লাফায় তৎসমের ছন্দময় ভাষায়
জামায় মাখে সে কালো, মাথায় অনাসৃষ্টি আলো-
অনায়াসের আশে রাগাপ্লুত প্রেমের বাঁশী বাজায়
অন্ধ করে দাও, কিম্বা ওকে হত্যা করাই ভালো,
বাড়ির মধ্যে বাড়ি করে এ মধ্যচিত্ত পাড়ায়
যে উন্মত্ত শূন্যতাকে সে হাতির পায়ে মাড়ায়!
চাকা
১
____
খাদের ধার ঘেঁষে নিরপেক্ষ চাকাটি
এখনো খুঁজে নিচ্ছে মাটি,
বায়ু নিতেই বা কতক্ষণ নেবে?
রাস্তা চওড়া করে যে পতনের থেকে বাঁচা
তা কিন্তু উত্থান ছিল না
শুধুমাত্র স্থিতাবস্থা রইলো-
চাকা নিরপেক্ষ ছিল, আছে ও থাকবে
চালক ও পথনিরাপত্তা তার কেউ নয়…
২
____
ঝড়, বৃষ্টি, বজ্রপাত
কিছুতেই দেখতে দেবে না দার্জিলিং;
এ এক ষড়যন্ত্র!
হত্যার দৃশ্য নেই, অবৈধ সঙ্গম নেই
ম্যাকবেথিয়ান পাপবোধ নেই
কেউ কারো মুখ-ও দেখিনি
দুটো চাকায় গড়াতে গড়াতে
নীচের দিকে নেমে যাব যখন
তখন উচ্চতা অন্য দিকে আড় নেবে
রোদ উঠবে তার প্রসন্ন দক্ষিণ মুখে
দর্শকের হয়ে ওঠাই
প্রতিটি দর্শনের একমাত্র শর্ত
তোমার দোষ নেই দার্জিলিং
আমাদের চশমা ছিল
চোখ খেয়েছে মাথা কবে!
৩
____
ম্যাজিশিয়ান হতে চেয়েছিলাম
পোষাক কেনার সামর্থ্য ছিল না,
আরেকবার কুস্তিগীর হতে গিয়েও
খর্ব শরীরের জন্য ফিরেছি,
বিমানচালক হতে গিয়ে জেনেছি
কী মূল্যবান পার্মানেন্ট অ্যাড্রেস
যা আমাদের ছিল না-
চাকার মতন নিয়মিত ও গড়ানে
একটা জীবন হলাম ইস্কুলে পড়ে…
রাত্তিরে
____
আমি কোনো মেঘ মেখে নেই
তবু কত কালো হয়ে আছি,
পাহাড় থেকে দেখলে ছোট
আকাশ থেকে দেখলে মাটি
বিদ্যুৎ-এর বিড়ম্বনার
য-ফলাটি, কেশবতী নদীটির
দীর্ণ পাড় হয়ে আছি
ভেঙে নাও গ্রন্থন রাত্তিরে ঝুপ
ডুবে যাব উদাসীন
এ জীবনে ঈষৎ ক্লান্ত হয়ে আছি
নারকেলের পাতাটি
__________
একবার আরোগ্য চেয়ে আরেকবারের
যে অসুস্থতারা মিছিলে গিয়েছে
তাদের নীল চোখে মাছিদের বন্ধুত্ব-
নারকেলের পাতাটি পরিপাটি
দুঃখ মেনে নিতে শিখেছে
রোদের তুলনামূলক ভ্রমণ
বৃষ্টির তুকতাক যাদুটোনা
অনিবার্যকারণবশত গ্রীষ্মের রাতে;
স্থায়ী কোনো ছবিই নেই
ছুঁয়ে দিলে প্রেম খসে পড়ে
সে সব এমন উঁই-এর ঢিবি!
কবি অন্ধ হয়ে যায়
__________
বেড়াতে যাওয়া লক্ষণ ফুটতেই
ফুলটাকে ছিঁড়ে নিতে দেখেছি
বাগানসমূহ অনন্ত উন্মাদনায়
ধেয়েছে ঝড়ের দিকে তারপরে
অন্যের বেড়াতে যাওয়ার ভাতে
ছাই দিতে আদ্যোপান্ত প্রস্তুত-
ছেলেটি নাইট্রো খেতে খেতে
পাখি হয়ে উড়েছে হালকা
পুড়েছে পতঙ্গ হয়ে আগুণে
বোন কাগজে সম্পত্তি লিখেছে
বিল্পবের সেই সব গান
চানঘরে জমা রেখে সেদিন
ধবল ছেলেটি সুস্থ ও সবল
যে কোনো দিনের থেকে ছুটেছে
রিহ্যাবের স্যাঁতা অন্ধকারে
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গম্ভীরতা
দিয়ে মাপার একক পেয়েছি
সম্মানিত জার্নালের ঘুপচিতে,
বিশদ বক্তৃতার মাঝে সাঝে
চুলকেছে সেই নোংরা জাঙ্গিয়া
কলেজের উপরের বেঞ্চে বসা
তনুরিমার প্যান্টিতে তারারা
গ্ল্যাকসো বেবির সুদৃশ বাহার
কালাহাণ্ডি নায়িকার অন্তর্বাসে
লতা, পাতা, ফুল ও সাপের
যে সব কেচ্ছা-কেলেঙ্কারি হলদে
যেখানে শেয়াল ডাকতো নৈমিত্তিক
সে সব বিন্দু ক্রমশ উঁচুতে আরো
ত্রিমাত্রিক জ্যামিতি আকাশে আঁকা
মাটিতে রোগগ্রস্ত ভীড় খুঁড়ে খুঁড়ে
অভাবিত পাতাল রেলে শীতাতপ
যাতায়াত সুগম হতে সুসভ্যতা
ইলাদের বাড়ি থেকে যদুকলোনী
ব্রিজ টাঙিয়েছে সাইকেল নিষিদ্ধর
পমফ্রেট, বরুফে ইলিশ মরা চোখে
খোঁজ নিচ্ছে রোজগেরে কলজের
মফস্বলের মেয়ে জিন্স, স্লিভলেস
আ-কার দিয়ে ‘পাথেটিক’ এঁকে
চুমুকে মেজেছে বাঁকানো ব্রাশে
শুতে যাবার আগে-পরের পাঠে
সংস্করণের পর সংস্করণ বেরোলে
প্রচ্ছদ বদলাচ্ছে, অলঙ্করণ-ও কিছু
লেন্স দিয়ে মাপছে ‘কিত্না ভাও’
সে সব বুঝে সংলাপ লেখা হবে
হোয়াট্সঅ্যাপ ঠুকরে টুং টাং-এ
জল মরে নুড়ি পাথরের নদীটি
রেলপারাপারের দ্রষ্টব্যে লজ্জিত
বর্ষার অপেক্ষা ছাড়া হাতখালি
ভিখিরিও পঞ্চাশ পয়সা নেয় না
আনা, চারআনা, দশ, কুড়ি শেষ
হাইড্রোইলেকট্রিকে গতর খাটায়
প্রথমে ডান চোখ নিভে আসে
সন্ধের পরে বাম চোখ পুঁজে
বীক্ষণ জমাট ধাপার নোংরা
এভাবেই কবি অন্ধ হয়ে যায়
সে সমুদ্র আর কই
___________
সে সমুদ্র আর কই
যেখানে ঘুম নামে
তাঁবুতে লেগে থাকে
বিস্তির্ণ মরুঝড়
দরকচা আপেলের মত
লাল ব্রা পড়ে আছে…
অর্থহীন
____
ডুবো জিনিস ভাসিয়ে তুলেছে শব্দ
মুছবে কালকেই, এমন করবে জব্দ
আঙুল রাখছি, ছুঁচ্ছি, বলছি বালতি
বালতি দিয়ে বুঝতে গেলেই গলতি
আকার কোনো শব্দের নেই, অর্থহীনও
দেখতে গেলে অর্থহীন এ দৈনন্দিনও
মানছি বলেই মানের কথাও বলছি
বলার জন্য বলি, এ কথাটাও জানছি
ডুবো জিনিসই ভাসিয়ে করছে জব্দ
কাল ডোবাবে মানে, সমস্ত নৈঃশব্দ!
সম্ভাবনা
_____
নাও
যে কোনো নাম দাও
একটা ভাবনা জন্মাবে
ধর চাঁদ
কিম্বা দ্বিতীয়পক্ষ
বা ইঞ্জেকশন
বাঁধা গতে ভাবা শুরু-
তার চেয়ে নাম দিও না
যে দিকে খুশী যাওয়া যেতে পারে
দীঘা কিম্বা দার্জিলিং
অথবা কেউই কাউকে চিনবো না
পাশাপাশি বাড়িতে থাকবো
উলটো দিকের দরজা দিয়ে
কাজে ঢুকে যাব
কখনো মুখোমুখি হলে
প্রেমেও পড়ে যেতে পারি ফের
নাও
নাম দিও না
সম্ভাবনা থেকে যাক…
টুকরো
____
১
তারার ক্ষত ফুটে আছে
আকাশের গায়
কবি মরিয়াছে কত
জোচ্ছনায় জোচ্ছনায়…
২
হৃদয়ের কাছে হেরে সে জামাটি
দর্শন, শিল্পের কারুকাজে
অপূর্ব মূর্খের শোভা…
৩
কুয়াশায় সব ঢেকে যায়
কিশোরীর নথ, কষ্ট দেয়…
৪
হে দর্পিত দুপুর, তুমি ওকে কষ্ট দিও
যতটা কষ্ট ও আমাকে দেয়
পুড়িয়ে শেষ করে দিও সন্তাপেও
যেমন সে আমাকে পোড়ায়।।
ব্রহ্মাণ্ডে বিষণ্ণ আঙুরলতা
১
_____________
‘Ah, God! but Art is long,
And Life, alas! is fleeting.’
ঘড়িওয়ালারা ঘুমোলেও সময় ঘুমোয় না!
সরল সত্য একটি মাছির মতন
ভনভন করে চলে
উড়িয়ে দিলে হাটে-মাঠে
গ্রাম-গঞ্জের থেকে ঢেউ
অন্ধকার ঢেউ উঠে
উটের চতুষ্পদাবলী সিরিজ
বালির পাহাড় উঠে ও নেমে
ক্রমে একদিন
সমুদ্রের দিকে যাবে
বা নাও যেতে পারে
এভাবেই খাওয়া-দাওয়া হয়
ডায়ালেক্টিক্স টিক টিক
কবে যেন গুরু দত্তের সিনেমায়
তোমাকে দেখলাম…
২
_____________
তো নিঃশব্দ হয়েছি যেমন হুকুম-
ভূগোল জুড়ে ছেলেবেলা টিনের ইস্কুল
ম্যাপপয়েন্টিং নদী সম্পর্কে সতর্কতা
এর পর তো বন্যা এল, না, এল না
পার্ক অ্যাভিনিউতে সিক্সথ সিম্ফোনী কে গাহিবে আর
ম্যাজেস্টিক সদাচার সমস্ত
জমিদারের হাতি ও মাহুত
তৃতীয় পুরুষ চতুর্থ নারী
আমি এলেবেলে, দুধুভাতু
ছাতা খোলার সঙ্গে রোদ বা বৃষ্টি
এ সব টালিগঞ্জ থানার কেস
হাওয়া-মোরগের থেকেই শুধু
জীবনে সৎ বন্ধুত্ব পেয়েছিলাম
৩
______________
চল্লিশের সমস্ত কিছু জমিয়েও,
দেশলাইকাঠির বাক্স, স্ট্যাম্প
পিকচার পোস্টকার্ড হয়েও যারা
বেঁচে তাদের স্বধর্মে আমি অস্থিত-
পাখিগুলো গ্রীষ্ম থেকে শীতে
কেউ গেল কী না
সে খবর বৃষ্টির দিকে গিয়েছে,
সম্ভ্রান্ত ফোঁটার টুপটাপ
নীল কাগজে শুষে
পানশালায় যাঁরা উল্লাস বললেন
এই মুহুর্তে,
কেউ
না ফেরার কবিতা রচনাবলীতে
ছাপেননি
খোলা দরজাও পেরোনো কী কঠিন!
______________
৪
______________
হতে বলা হয়েছিল
তখন না হওয়ার যাবতীয়
সব সফল হয়ে ওঠে,
আমাকে মানানো যাচ্ছে না
আমাকে মানা যাচ্ছে না
হয়ে ওঠাকে বিপুল চিয়ারিও
টূস্কি মেরে ছাই ঝাড়ার মতন
জেব্রা ক্রসিং মেনে চলা
পাজামা পরে ঘুমোনো
ক্রিয়া খসে গেলে দুশিন্তাগ্রস্ত হওয়া
এ সব তোমাদের বাড়ি
আমাকে নেমন্তন্ন না করে ঠিক-ই
অপদস্থ হওয়া থেকে-
তুমি সামাজিকভাবে সেলিব্রেটেড
________________
৫
________________
বড় বড় কথা শুধু হোর্ডিং-এ থাকবে
দূরভাষিত হবে, তোমাদের
হ্যাঁ, তোমাদের এক্তিয়ারের সেই
ঘোড়াগুলো রাত্রে আলিপুর ব্রীজের পাশে
মাছি তাড়ায়,
ব্রীজ দুলে উঠলে সম্পর্ক দোলে
খসে গেলে এ-পাড় ও-পাড় নেই,
পাশের জেলখানা ঠাণ্ডা সতর্ক গলায়
উঁকি দিয়ে ভাব করে মিটমিটে চাঁদ
শালা, মহা শয়তান-
উঁচু উঁচু পাঁচিলের ওপাশে ছোট ছোট মানুষ বন্দী
মুক্ত যারা ক্রিম মেখে ঘুমোতে চললো
তাদের শরীর স্বাস্থ্য টিভির মতন দেখতে
হতেই হবে জোছনাকুমারী,
কথা বলবো না একটাও-
উত্তেজনা এলে ঝড় হবো সোমত্থ
উড়িয়ে নেব ন্যাকা মাছিদের জটলা
যারা কাল কে কী বলবে
পরিকল্পনা করছিল …