নশ্বরতা
________
আমি জানি শুদ্ধসত্ত্ব
তোমার নাম,
আমি জানি শুদ্ধসত্ত্ব
সর্বনাম নশ্বরতা…
________
যে বাঘ
_______
তড়িৎ গতির বাঘ হৃদয়ে লাফায় হলুদ কালো
অন্ধকার, অন্ধ অন্ধকার, ঢের ঢের তবু ভালো,
মৃগতৃষা যদি নক্ষত্র, যদি ধায় সে অমলিন প্রেম
ছুটি নেব, চলে যাব কাঁটাপুরুষের জন্ম বেথলেহেম;
আদিম ব্যাঘ্র যদিচ ক্ষিপ্রত্রাস, প্রেমার্ত আগুণ কালো
অন্ধ, নদীতে নাইবো পরমাশ্চর্য্য তত্রাচ ছলোছলো-
____________________
দৃশ্যের মধ্যে কেবলি দর্শক জন্মাচ্ছে
___________________
দৃশ্যের মধ্যে কেবলি দর্শক জন্মাচ্ছে
দেশের জিডিপি উল্লম্ফনে
ভের্তভের ক্যামেরাটা মাঠে
সাদাকালোর অভ্যন্তর ফেটে
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ
মৃত সিনেমাটোগ্রাফার
রোল হচ্ছে
কন্টিনিউটি থেকে কে আজ বধির?
এরপর তাপপ্রবাহ চলবে
রঙ্গরস পর্যাপ্ত মজুত রেখে
দরজা জানলা বন্ধ
কালো কালো
চলন্ত বাড়ি লেপ্টে থাকবে
মন্দাকিনীর গায়ে
গাড়ি ভর্তি সেই সব কাঁচে
রাম তেরী গঙ্গা ময়লি
বাঁ স্তন আলগোছে নিষ্পাপ,
ডায়ানামোর আলো
গিরিশ ঘোষের অমিত্রাক্ষর ঠিকরে
জ্যোতিরিন্দ্রের পকেটে
বেশ্যার রুমালে
অভিনেত্রী সাজে
খটাস খটাস খড়ম
বিদ্যাসাগর সাঁওতালপরগণার দিকে
দেশে কোনো সুখ নেই
বঙ্কিমের তৃতীয়া
আত্মহন্তারক থিয়েটারের জন্য,
আঙুরবালা সিনেমার গান
বিকাশ বাণিজ্য হলে ভট্টাচার্য্য অভিধাপ্রাপক;
ফাল্গুণে শিবের পুষ্পমহালয়ার
যাত্রা শুভ হোক
দশজনে দেশ ১৮৫৭ তে বোঝা যাচ্ছে না
কমরেড কৃষক বাড়িতে বাড়িতে পায়খানা
নির্মল গ্রাম ম্যালেরিয়াহীন ইত্যাদি থাকেনা
চো রামাসোয়ামীর এলিট স্যাটায়ারে-
দেশ গুণলে দশজন
১৯৪৭-এর পর থেকে
জিডিপি + পার ক্যাপিটা ইনকাম
ইজ ইক্যুয়াল টু
দৃশ্য!
________
বৃষ্টি
_______
এবার ভীষণ বৃষ্টি আসছে আকাশ অঘোর কালো
দহনক্লান্ত পাথর যারা ভিজবে তুমুল, সশব্যস্ত
ঘূর্ণি হাওয়ার অশান্তি শেষ থিতিয়ে যাবে ধুলো,
প্রাণের মধ্যে আরাম যেন রবীন্দ্রগান সেই সমস্ত-
এখন ভীষণ বৃষ্টি নাবছে, এবার তবে চলো
শালের বন, দু-ধার জুড়ে মগ্ন নীরব আকাশচারী,
মোরাম প্রলেপ লাল রাস্তায় কালো মেঘে আলো
হাত ধরলেই আভোগী ছোড় দৌড়ে ছোঁবে সঞ্চারী।
এই তো তুমুল বৃষ্টি ফোঁটায় নিবিড় স্মৃতি এলো
বিরহকাল, এবার ছুটি, বেড়াতে যাই চলো!
______________
মৃত্যু
________
মৃত্যু, হ্যাঁ মৃত্যু…।
তার কথা একটু বলি! সে চলে যাবে। জেনে গিয়েছে সে ও আশপাশ। সবচেয়ে প্রিয় যার সে বসে আছে পায়ের কাছে। সাদা চাদরে ঢাকা তার শরীর। সেই চাদরের উপর দিয়ে হাত রেখেছে দুটি পায়ে। বিনত। অনুনয়ে লিপ্ত। যেওনা!
মানুষকে অনুনয় করে কি লাভ? তার ইচ্ছাধীন না মৃত্যু! তবুও তার কাছেই অনুনয় করে মানুষ। কেন না মৃত্যুকে অনুরোধ করে কোনো লাভ নেই। সে নির্মম, নিষ্ঠুর। সে কারো কোনো কথা কখনো শোনেনি, কখনো রাখেনি কোনো অনুরোধ। তাই দুটো পা ছুঁয়ে নির্বাক আকুতি। তবু মৃত্যু প্রেমিক বা প্রেমিকা না। আজকের প্রিয় খেলা কাল সে ফেলে যাবে এমনটা না। কখনোই এমনটা হবে না। সে আসবে। আসবেই। কথা রাখাই তার দস্তুর।
হ্যাঁ, মৃত্যু…আহ্ মৃত্যু! একমাত্র তাকেই, ‘অপরিবর্তনীয়’ এই খেতাব দেওয়া যায়।
______________
ডাউন ট্রেন
_______
যে যে শব্দগুলো হারালো
জোনাকি ধাওয়া দিয়েছিল
সব
এবং
রাত্রি শেষে জোনাকিরা
রেল লাইনের উপর-
শব্দগুলো পাশে বসে
হাত ধরেছিল প্রেমে,
ট্রেন এসে পড়েছিল
পাখাভর জোনাকিরা উড়ে
শব্দরা নি-পাখ, ডাউন ট্রেনে চাপা
_____________
এখনো
________
লেখা হয়নি আঙুলে রূপকথা
শব্দগুলো জমে গিয়েছে নৈঃশব্দে
খোলা পিঠে তোমার
এখনো পাইন বন
মায়াবী সূর্যাস্ত
একলা নৌকা
দুরন্ত ঘোড়া
বাদামী পিঠে তোমার
মাটি মাটি আর মাটি
লেখা হয়নি এখনো রূপকথা
দুধপুকুর ছুঁইনি,
প্রাণভ্রমর অনাঘ্রাত অভিপ্সা
অতল নাভিতে
শব্দগুলো হিমেল
আবু ঘ্রাইব ডাকছে…
_________
মৃত্যু (দুই)
_______
পাশ ফিরলেই ঠেকে পিঠে পিঠ
আমারই মতন,
শুধু আমারই মতন যেন সে
চিবুক, কপাল, ঠোঁট
সব কিছু তার
আমি থাকি এই পাশে
তার ওইধার;
আর কটা দিন,
হাতের করের মাঝে
জমে ওঠে ঘাম
শ্রম, বিফলতা যত
কষ্ট, অভিমান
গোণা ভুল হয়ে ফের
শুরু থেকে পিঠে পিঠ
বাঁচা দুরু দুরু,
আমারই মতন সে
চিবুক, কপাল, ঠোঁট
সব কিছু তার
আমি থাকি এই পাশে
তার ওইধার…
________
জল, বৃষ্টির রূপকথা
____________
জল গড়িয়ে নামছিল চুল দিয়ে
স্ফটিক বিন্দুর মত জল
ঠিকরে ঠিকরে আলো
আর অন্ধকার
নামছিল তোমার কপাল,
নাক, ঠোঁট, চিবুক সব ছুঁয়ে ছুঁয়ে
বারবার চোখ বন্ধ হয়ে আসছিল
আর চোখ মুছছিলে
সব ঝাপসা, সব অস্পষ্ট। আমিও।
জল গড়িয়ে গড়িয়ে আসছিল কন্ঠার অল্প জেগে থাকা হাড় ছুঁয়ে বুকের সমতলে। সমতল থেকে পাহাড়ে। নরম, ভিজে যাওয়া পাহাড় গড়িয়ে নামছিল গভীর এক নাভিতে। জমছিল। তুমি হাঁটছিলে আর তিরতির করে কাঁপছিল নাভিমূলের জল। নাভিমূলের বাঁধ ভেঙে কোমর ছাপিয়ে চুলের শেষ রেশ ছুঁয়ে এক রেশমী উপত্যকায়। জল নামছিল। উপত্যকা উর্বর করে জঘন পেরিয়ে, এক রম্ভোরুর রাস্তা ধরে পায়ের পাতায়। তুমি চলছিলে, জল চলছিল। তুমি চলছিলে, জল ঝাঁপাচ্ছিল শরীরে তোমার। তুমি আর জল আর চলা আর নদী আর উর্বরতা আর সভ্যতা আর তৃপ্তি যেন সংস্কৃতি। মানবী, দেহ এক অলৌকিক পাখি, গোপন ডানার ভরে যায় উড়ে যায় কালান্তরে। জল এক নীলাভ রূপকথা।।
__________
মৃত্যু ৩
_____
হাত থেকে হাততালিগুলো
খসে গিয়েছে
এখন কিছু নীরবতা,
রথের মেলা, নাগরদোলনা সব
গতকাল ছিল
দুটো চোখ পড়ে আছে
বর্ণাঢ্য আগুণ নেবে
একদিন বহ্নিমান চিতায়
এসো, দেখাদেখি হোক
নাটকীয় মুগ্ধতার পরেই
জানা যাবে নাট্যক্রীড়াটি
কতোটা দূরগামী…
______
বুকি ও নক্ষত্র
_______
সাধারণের বাইরে যে দু চারটি নক্ষত্র
তারা সব মৃত্যুপথগামী!
গড়িয়া-ব্রহ্মপুর গ্যাছেন
আপনি কখনো?
সেখানে মোষের বাথানে
রাত হলে বাঁকানো শিং-এ
নক্ষত্র মৃত্যু ঠিকরে
শক্ত ঘাড়ে
কালো মোষেরা
গেরিলা-যুদ্ধ অপেক্ষায়
একদিন ওরা ময়দান নেবে,
বুকিরাই শুধু এর তাৎপর্য্য জানে
আর জানে দু চারটি নক্ষত্র…
_________
ভাষা
_____
কদিন ভেবে দেখলাম
ভাষার অন্তস্থ
যা কিছু শব্দ সঞ্চয়
তা আরণ্যক, শ্বাপদসঙ্কুল
এবং দুর্বোধ্য-
আত্মীয়-স্বজন কথাটাই
একটি নিখুঁত প্রহেলিকা!