ফেব্রুয়ারি ২০১৫
সাদা-কালো বই থেকে
১
প্রতিটি পাতাকে জ্বালিয়ে দাও
এক একটা ডাকাত গাছ
পেশল হাতের শেকড়
যা পিষেছে বুকের ভেতর তোমাকে
মন্থন করেছে সমুদ্র
মাটিতে গাঢ় আসবে তার ছাঁচ
প্রাচীন শিলালিপি
তুমি লেখা হয়ে যাবে নক্ষত্রলোকে –
পড়া শেষ হয়ে গেলে ভাসিয়ে দাও
আমি শূন্য স্থানে যা খুশী বসাও
এ জুতোয় কোন পা মাপে মিলবে না;
এমন ভাষ্কর অক্ষরে শব্দে চেঁচে
স্থাপত্যে গড়ে যে ঋজু সন্তানের মা –
খুঁজে জুটবে না,
বোঝা যাবে ভোরবেলা এলে
সন্তানের রাতজাগা – ঘুমে ঢুলে গেলে
মায়ের এলানো মাথার নীচে
যে দেবে বালিশ
সঙ্গম নেশাতুর ঘুম ছেড়ে
এ পুরুষ, কবি ছাড়া মানুষে হবে না;
সাদা-কালো চিঠি
প্রকাশ্যে প্রেম দাও
নতুবা জ্বালিয়ে দাও পাতা প্রতিটি!
২
উল্টোদিক পড়লে সোজা বোঝা যায়
রাস্তাটা স্বচ্ছ হয়ে আসে
যাতায়াত চলে
যাওয়া চলে না
ইঁদুর ও ঘুণ অব্দি বই
তারপরে তাক শুধু
৩
অন্ধত্বসমুদয়
রাগরূপে হংসধ্বনি ছিল
ক
দুটি অন্ধ পেরিয়ে যাচ্ছিল পরমাশ্চর্য্য পথ
আয়নার মধ্যকালে বিজ্ঞাপন বিরতি
ভায়োলিন থেমে যেতে একজনই এল
দুটো চোখ হাতে সে রেখেছিল
খ
কেউ যেন মৃদুলের ইঙ্গিতে আলোকণা
বেছে নিয়েছিল আঙুল অপরূপে
তুলে দেখেছিলাম সন্ধ্যা ধরা ছিল
জলশঙ্খ, বিসর্জনের কাঁধে হাত
নদীর পাড়ে বসেছিল সারারাত
গ
প্রশ্ন করেনি যারা তারা সিলেবাসে নেই
পাঠ এভাবে লিখিত,
বাধ্য ছাত্রের জামা দিয়েছি দারোয়ানের হাতে
নষ্ট ছেলে, কিছুতেই স্পষ্ট হবে না
ঘ
অভ্যাস ছোঁয়নি এতো অজস্র যাপনে
একতারা ছিল হাতে
প্রভাতেও
অলীকের কানে কানে বেজেছে সুন্দর
আজ শুধু পলি পড়ে আছে
৪
ক
অনুল্লেখে কয়েকটা লাইন
সাপের ফণার মত উঠলো,
ও-পাড়ে কে দেখে এলাম
ছোবল অতীব রসালো
খ
বিষ নিয়ে আছি, বেশ আছি
আজ থেকে বিষও ছড়াবো
আলোবন্ধদ্বার, রাত্রিকে চিনি
আহত-বিদ্যুৎ, সকাল পোড়াবো
গ
রক্তিমের ফেড আউটে
কিছুটি ধূসর হবে না
লাফিয়ে ধরেছি ঘাড়
শূন্যতার
অন্ধকার থেমে থাকবে না
৫
ক
কার হাত ধরে ছায়া গিয়েছে দূরে?
জারুলের বনে এত মিথ্যে গাছ?
সাপের ঝাঁপিতে হাত দিয়ে
বাঁশিটি ধরেছি
আজ কি নাচ বন্ধ হয়?
অবনত হও বলেছি মৃত্যুকে
দেখো কত ভয়ঙ্কর ক্রোধ
একবার চাঁদ খুলে নিয়েছিলাম
আকাশের হৃদয় দুমড়ে
মরচের মত এ পাশে এসো না
খ
ফোনে যারা পাচ্ছেন না তাঁদেরকে বলি
মেরামতি চলছে
লাইনটি ঠিক হয়ে যাবে
ফোন থেকে যাবে
লোকটি অপূর্বের বন্ধু
অনন্তের দিকে যাচ্ছে
অন্য কেউ কথা বলে নেবে
৬
ক
মেঘ অ্যারেস্ট করার ঝুঁকি
যে বিদ্যুৎ নিয়েছে
মেঘ ভাঙবেই
পাহাড়ে বন্যা হবে
যেখান থেকে দেখলে দেখাও যেতে পারে
ও সেই বিতত বিস্তার
ক্রোধ পাথরের পাড়
সবাই যাবার আগে গান শুনছিলাম
সবাই যাবার পরে গানে চলে যাই
খ
আশ্চর্য্য দক্ষিণে ছিল প্রকাশিত?
উত্তরে শুধু হাওয়া
যাওয়া
৭
ক
ডালিমের গাছে রেখেছি নামতা
মুখস্থ বলে, অবিরাম
যারা সব তোতা
অথচ ফুলেরও অভিপ্রায়
খুলুক বন্ধ লেদ-কারখানা
কারিগর স্বাগত জানায়
এইভাবে জয়-পরাজয়
কিছু নয়
সব কিছু নয়
খ
গল্পের মধ্যে খুব গ্রীষ্ম
ত্বকে দাগানো লাল
বর্ষায় তুমুল ভেজাভেজি
চূড়ান্ত উথাল-পাথাল
শরতে ঝকঝক উঠলো
দূরত্ব, আড়-দেওয়াল
বিমনা মাঠ হিমসমুদ্র
লবণ হেমন্তে ঘর-দোর
ভোরভর্তি শীত কাঁপতে কাঁপতে
উষ্ণতার জন্য আকুল
বসন্ত, ইমপোর্টেড অ্যাসল্ট রাইফেল
আঙুলের হৃদয় পুড়লো।
৮
ক
পড়াশোনা পেলে হত সিরিয়াল কিলার
চাষি হয়ে মরে গেছে ঝুলে
মৃত্যুর গাছ থেকে
পক্ষপাতের ঝুড়িও নেমেছে,
একটু আগেভাগে
চাষিদের দাঁড়ি পড়ে গেছে –
পেছন পাকা দার্শনিকের
উত্তুঙ্গ বত্রিশেরা
উক্ত লেখালিখি
শূন্যতা একটুও নড়ায়নি
মরে যাবে জেনেই
জন্মদিন জন্মদিন হৈ হৈ
অশ্লীলতা-গানে
সকলেই মরে যায়
একটি চুম্বনের গভীরতায়
আজন্ম মাছের কষ্টে
একাকী স্থায়ী হয়ে আছি
খ
কষ্টে আছি
হাত কেটে ফেলে
আরো আরো ক্ষতে
বসে আছি মৃত্যু দেখতে
নৌকা সফরে
কালো জল
ভালো থেকো
বই বন্ধ হয়ে গেলে
অক্ষর ভালবাসা গায়
টুকরো
১
আকাশ যদি রজস্বলা
ত্রিপাদভূমি ফালা ফালা
গর্ভ হবে না,
ত্রিবেণীতে স্নান করিলেই
পূর্ণ হবে না
২
গ্যালাক্সিগুলোর মধ্যে দিয়ে
হাঁটতে হাঁটতে
ভয়েডে দাঁড়ালাম
সাদা রঙ আলখাল্লাটি
আকাশ থেকে লুটোচ্ছে;
মিত্র সে
আড়ালে রেখেছে ক্ষত
ক্ষতিও করেনি
তার চিঠি অন্ধকারেই পড়েছি।
৩
বাস এসে গেলে
উঠে পড়া শুধু
বিদায় বলা নিয়ম বিরুদ্ধ
শিখেছি ইস্কুলে
৪
যেখানে শরীর শোয় সেখানে শ্মশান
আমি নেই, পড়ে আছে আগুনের স্নান
৫
মোড় আসছে,
একটার পর একটা
ডাকবাংলো, কৈখালি
কেউ ফিরছে,
ঘাসের চাদর গায়ে
তারাস্নান সেরে
ফিরেছিল নিজেতে?
ক্ষতমুকুরের দেশ থেকে
আহা, এমনও অন্ধকার ফেরে?
ও কেন একলা এত,
কেন এত মিথ্যে রচনা?
ও তো জানতো না
কিছু জানিত না –
এভাবে পোড়ালে ওকে
গোড়ালিও ছাই হয়ে গেছে
পা তবে ফেলবে কোথায়?
বর্ণময়, এ তুমি স্বরলিপি
মানবের প্রিয় গান নয়!
৬
বলো উল্লাস!
চমৎকার খোলা আছি
মদের গেলাস।
৭
বাহান্ন থাবা গুণে একটি বেড়াল
সিঁড়ি বেয়ে উঠলো ত্রৈপুরে
মধুভান্ড, নিয়ে অখন্ড
দেবী জাগলো চিৎপুরে
৮
ত্রাসবিলগ্নঅতিসারকুসুমপ্রসার
চিতহরিথরথরিরতিরজসুখসার
বহ্নিবেয়াকুলঝলতৈনিশাদিশৈ
সখিরিকামিনীমেঘঘনকানুকৈ?
৯
দারুচিনিবন
নরম চিঠিটি যত্নে পড়েছি
বৃষ্টি খুলেছি
হাঁসের যত্ন-পালকে
১০
যে বলটা লেট স্যুইং-এ
যেটা আচমকা শর্ট
দুটোই অহঙ্কার
ছুঁয়ে বলেছি
বাউন্ডারির বাইরে যা
১১
মুখ রেখেছি সঙ্গোপনে তোমার বুকে
মন্দ আমায় কবে থেকে বলছে লোকে,
মুখের মধ্যে বিষ ঢেলে দাও ভীষণ গাঢ়
আর কিছু না, এতো তুমি দিতেই পার
১২
পাথরের খোঁজা থেকে ভাঙা চশমা কুড়িয়ে
খুব ধনী, বসে আছি নিরুক্ত বিবরে
হার্দ্যিক, মতামত নেই
ভালবাসা গ্রন্থের নিবিড়ে
গাছের সংকেতে রেখে
ধুনী জ্বলে অবিরাম
যায়, আসে, এসে চলে যায়
মহাশূন্যের ভাঁজ কুঁচিতে
তোমার লাল শাড়ি
নিষ্ঠুর স্তন বেড়ে
কোথায় যে শ্বাসকষ্ট –
এত ভালবেসেছি, বুঝতে পারিনি
১৩
আর কত ভালবাসলে বুঝতে পারতে
ঈশ্বরেরও দুই হাত, দুই পা
ঝুলিতে চাল দিতে সব মাপা!
আমি শুধু বেহিসেবী,
পত্তন-ঘুড়ি নই
আবাদ, সান্ধসুখ ছেড়ে
দিনের ভিক্ষা তোমাতে ঢেলে
উড়ে যাই
কখনো পূজো চাইনি
কৃতজ্ঞতাও
আর কত ভালবাসলে বুঝতে পারতে
এপাশে তুমি ছিলে
ওপাশে আত্মহত্যা!
১৪
জ্যোৎস্না মরিল অতএবে, কাকচক্ষু জল
স্মৃতির উদ্যত তুঙ্গে,সুস্থাপিত নিবিড় বিরল
এই গ্রীবা, মেঘ-সমাচার শেষে অতিপ্রাকৃত
দুলে যাবে শূন্যতায়, আন্তরিক শূন্যের ভিতর
১৫
যেই ফুরোয় দিনের দেওয়া-নেওয়া
তাহার সঙ্গে আমার চেনা জানা
চন্দনের বনে, আগুন জ্বলে খুব
‘আমি’টি আর ঘরেই ফিরলো না
বসন্ত কি? নাকি হেমন্তে সে ভুল?
নিখোঁজ তাকে কেউ-ই জানিতো না।
জন্মদিন
জন্ম শেষ, নাচ চেতন। তুমি অন্ধকার। ত্রিনেত্র জুড়ে নাচ। একটি পার্বণ শেষে যতটুকু অতিথি, তার চেয়ে বাতাসের গতি তীব্রতর। বয়ে যায় সব সমর্পণ। আলিঙ্গন কুঁকড়ে ডুবে যায়। ও যেন রাত্রিটুকু আনতে গেছিল। যে মিথ্যে, যাহা অর্ধসত্য, যে কোন অছিলায় খুলে যায় যেখানে আগল, দাগ পরে যাহার তাহার – সে সব দাগের দূরে একা একা যাও, দৈনিকে মাইনে নিও না। জন্ম শেষ, যে রাস্তা কেউ নয় বলে হাঁটে, সেই পথে চাকা। শেষ হাতের অলীক থেকে রক্ত গড়িয়ে এসেছে। এ তোমার শ্রেষ্ঠ উপহার। আহ্লাদিত, লীলাময়ী, ঘাসের দীনতায় তবু যেন ছলনা গাইনি, পায়ে পায়ে থেকেছি বিস্তর। এই নিয়ে গেলাম, এই যন্ত্রণার ভাষা, নিঃশব্দে অতিশূন্যতায় যাক। মানুষের গান থেকে মানুষ গড়িয়ে তাল-লয় শূন্য হয়ে যাক। জন্ম শেষ, নীল হও অমৃত-মন্থন।।
স্মৃতি থেকে উঠে
১
মন কেমনের রেলপথ আছে আমার
কয়লার ইঞ্জিনে ভরে দৃশ্যপট
চোখ পাতলে ঝাপসা
কয়লা পড়েছে
২
হাতে কোন রেখা ছিল না
মেললেই ফুটে ওঠে
শুকনো কিছু নদী