ক্রেয়নের অনুচ্চারিত যা
১
এরপরেও ফেব্রুয়ারী আসবে
মেট্রোর রাস্তা হবে
ব্রীজ উঠে যাবে নিবন্ধ-বন্ধনে
শীত – বসন্তের দোলাচলে
ভেঙে পড়বে আয়নাগুলো
ব্যপক বিক্ষোভ হবে স্মৃতি-অমনিবাস
ফলস-সিলিং দেখে যারা খুশী
ছাদের নিশ্চয়তা নিয়ে কথাটি কইবেনা
আমার কালো রঙের জামা
আমার কালো রঙের জামা
জামার কালো আমি
২
অনেকদিন ঘুমের থেকে ওঠা হচ্ছে না
যেহেতু ভোরের কোনো অফিস নেই
সন্ধের কোনো ছুটি নেই,
প্রতিদিন বেরিয়ে পড়তে পড়তে ভাবছি
বাইরেই তো আছি সমুদয়
দরজার থেকে নেমেছে বারান্দা
শূন্যে দুলছে অভিব্যক্তি ক্রিয়াপদে
ছবির থেকে ঘটনা উঠে আসছে
যা ইভেন্ট, দেশ-কাল সম্পৃক্ত
গঙ্গাপাড়ে স্তব্ধতা
আমাকে কেউ বলেনি
‘নিঃসঙ্কোচে বোসো, তুমি রবাহুত নও’
দোয়েলের সংসার কেমন?
আমার জানা হয়নি …
টুকরো
১
কিছু আকাশ সাজাও, প্রসঙ্গে সেতার বাজবে
একটা রাক্ষসের পাশে খোক্ষস ছানা
পেত্নীর আলগা আহ্লাদ ঠোঁট মাখিয়ে
আলস্য সাজাও কিছু, উপরন্তু সংসার…
২
বহুবার যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরে দেখেছি
যুদ্ধ শেষ হল না
কারা যেন যুদ্ধ লাগিয়েই রাখে
তবু একদিন উজ্জ্বল শান্তি আনবোই
সব জন্ম বৃথা যেতে পারে না …
৩
এতদূর ভালবাসা যেতে পারে
যেখানে আলোও যায় না
ব্রহ্মান্ড শেষ হয়ে যায়,
কাল বাইক, দুটো ট্রাক একটা পুলিশ জীপের চূড়ান্ত বিন্দুতে
নিয়ে যাচ্ছিল,
চাকাটা হড়কে পিছলে দিল একচুল
জীপটা চোখটিপে চলে গেল মুচকি
ট্রাকদুটো বলল ‘মর যাতা আভি’
আমি মুখটা দেখছিলাম ঢেউ-এ
ছুটে এসে যে আছড়ে পরবে থুতনিতে
পরম প্রেম দেবে
যা আমাকে কখনো নি:সঙ্গ হতে দেয় না
ভালবাসা এত দূর যায়
তাই তারারাও চিঠি লেখে তাকে
নাসা ভালবাসা মডেলের স্পেসশিপ
বানানোর খোয়াবও দেখে না
একবার ভোরবেলা এসো
তাকে তুমি দেখতে পাবে অপেক্ষায়
৪
সৃষ্টির যদ্দূরে দেখি এই ধুলো আমি
ভীষণ বাজারে খুব কমদামী
পায়ের পাতায় থাকি অশ্রুত নুপুর…
৫
যেখানে অপূর্ব, তুমি সেই বাগানের ফুল,
আমি আধোছায়া, অল্প একটু ভুল
তবু কিছু দেওয়া-থোওয়া রাখি
আকাশ তোমার, ভিনদেশী পাখি,
স্নেহের পাহাড় যত, সমুদ্র সমুদয়
সকলি তোমাতে যেন তৃপ্ত হয়
যা কিছু আমার ছিল সব রাখলাম
হৃদয় অবাধ্য ঘোড়া দিলাম দিলাম
ভাল থাক, ঝরণার স্রোত অবিরল
ভাল থাকা, দেখতে তুমি অবিকল
৬
দুপুরে রান্নাঘর ধমকালো,
মায়ের কষ্ট হচ্ছে দেখিস না?
কাজে লাগলাম,
প্রায় বিকেলে বাগান বললো
বাবা কি বানের জলে ভেসে?
কাজে লাগলাম,
বিকেলে পরিশ্রম মুছে আকাশকে,
বন্ধু কেমন আছি রে?
নিভে সন্ধে এল…
খুন
___
যে বিভঙ্গে ভেঙেছিলি উত্তুরে ম্যানসনে
সে স্রোত ছবিতে এঁকেছি
নাভিমূলে জিভের আরতি
পদ্মপাতা বুঁজে যায় সুখে ও অসুখে
নেমেছি গভীরে তোর
বাম হাতে স্তন
প্রতিটি শীৎকারে শুনেছি ঘৃণার গর্জন-
আমিও তো ঘৃণাকে বয়েছি
রাশি রাশি ঠকে যাওয়া
কনুইয়ের কালো
পায়ের নীচে জ্বালাপোড়া ক্ষত,
ফিরেছে আদিম বনে ওই
ম্যানগ্রোভে বাঘ
ছিঁড়েখুঁড়ে খাবে প্রেম
শরীরি সন্ত্রাস,
দেখা হবে ঝড়ে ও সমুদ্রে
দেখা হবে অদেখার পাড়ে
মারাত্মক যুদ্ধ হবে
তোদের জটিল সিঁড়িতে
আজ কিছু ছুঁলে পুড়ে যাচ্ছে
আমি থেকে আমি সব নিয়েছে বিদায়
দেখা হবে, খুনোখুনি হবে
অভ্রান্ত নিশানায়…
পারাপার
______
গভীরতার অন্তিমে রেখেছি স্পর্শটুকু
ছুঁয়ে যাও এভাবে হাতটুকু যেন নৌকা
পারাপারের আন্তরিকে তীব্র জেগেছে পাল
মাতাল, মাতাল –
ছুঁয়ে যাও যেন শান্তি
সব কিছু দিতে পারলে
পায়ের পাতায় চুমু খাওয়া যায়
এ জীবন শুষে নিলে
চোখের পাতায় যায় ঠোঁট
ছুঁয়ে যাও আকালের মত
বহু বৃষ্টিবছর পরেও
মানুষ ভোলে না যাকে…
বাঘ
___
ওপাশে ঘুমোচ্ছে বন্ধুগন
চিরসুখী, চিররুগ্ন
এ ঘরে টেবিল পাতাকাটা
বেঞ্চিতে সংস্থাপিত সামান্য
এই ঘুমদেশ, এই সন্ন্যাস!
হাতের থেকে হাতকাটার মুহুর্তে
সোল্লাসে বলেছি
এই হাতে রক্ত লেগে নেই,
নির্বাসিত জেনে
আলতো আদরে উড়িয়েছি
জলফড়িঙ
মেঘমুড়ে নেমেছি
মাছেদের দেশে
ভালবাসলে, গুলি করে মেরো মর্যাদায়
কীটের মৃত্যু যেহেতু বাঘের জন্য নয়
ক্রোধ
——-
১
ঝণ্ করে ভেঙে গেল
ণ-টা অনেকক্ষণ রইলো
অ নে ক ক্ষ ণ…
২
শ্লো-মোশনে ব্লেড চলছে
সবজে শিরাতে গাঁথলেই
পিঁপড়ের সারি রক্ত
অনুমান, সাদা বাথটাব দৃশ্যে
এবং সেই তোয়ালে মেঝেতে
যাতে নারীটি ঢাকা ছিল আশ্লেষে
৩
খট খট খরর খট খরর
টাইপরাইটার শোনাবে
কাতারে কাতারে মানুষ
মৃগীরোগের কাঁপুনি নিয়ে
হাতে, পায়ে, হাঁটুতে
আছড়াবে মাটিতে
প্যান হবে র্যাপিড
অনিবার্যতা
————–
যে পথে তুষার পরে
ব্লিজার্ড ওড়ে
ঘাড় গুঁজে প্রাচীন অভিযাত্রী
মমিবত সংরক্ষিত,
সে শৈত্যে
থামতে বল না প্লিজ-
‘অনিবার্যতা’ একটি অসহায় শব্দ
তার ওপারে গিয়ে নিজেকে নিয়ে
হা হা হেসে না হয় ঘুমিয়ে পরবো!
আশা
——-
পাতা-ঝরা দিনে সে এনেছে সবুজ?
বোলো তার অপেক্ষায় ছিলাম!
ট্রামের চাকায় বেজে জলঘুঙুর-পথ
পট, পিঠ ভেজা পল্লীশ্রী কমলালেবু রোদ
লিখ তার প্রতীক্ষায় ছিলাম;
ভোর হেঁটে এসে বহুবার
রাতভোর জাগায় এলাম,
পাতা-ঝরা দিনে যে এসেছে অবুঝ
তাহার আসার নিরুক্ত আশায় ছিলাম।
ভাল থাকা
———-
যেদিকেই ফেলেছি পা
ধান মাপা
রাত শেষ হয় নাক্ষত্রিক
নীলচে হিমেল নীচে,
ভাল আছি
এইভাবে মেপেঝুকে আছি,
দুটি পৃথিবীর দূর
সেজে আছি অন্য ভুবন,
কাছে যেতে
ঘুরে ঘুরে জল,
সন্তাপ শেষ
এই চলাচল
সম্বল করে বাঁচি,
ভাল আছি
ভালদের মত করে আছি!
একটি কামনা থেকে গেছে
——————————–
নাভিতে আমূল দিয়েছি জিভ,
কর্ণকূহরে ফিরে
ঘোর লাগা স্বরে উচ্চারণ
‘প্রসীদ জগজ্জননী’
মনে পড়ে?
একটি কামনা থেকে গেছে
অস্তিত্ব তুমুল ছেনে তোমার মাটির
বীজ বুনে, ফিরে আসতে চাই
অমল সন্তানে;
স্তনের বৃন্ত শুষে উত্তুঙ্গ পুরুষ
কঠিন পেষণে ফল
ফিরে আসতে চাই
কোমল সন্তানে।
মিলন্তিকা
১
মেঘলা স্তনে মুখ
আদর হয়ে ঝর,
পদ্মপাতায় জীবন
অমন থরথর…
২
ঐ নাভি, যাহা পাতালগামিনী
সুখ কেঁপে ভেঙে ভেঙে পরে
কামরূপে কাব্যে সংস্থিতা
ঈশ্বরী ডুকরে ওঠে জ্বরে।
৩
যতদূর পারে আকাশ
ততদূর যাব
শূন্যতায় ভেসে বহিরাগত
গোলাপের দিন দিয়ে যাব,
হেসে খুব অবিরল
ঝরণা সাজাব
পাই, কিছু নাই পাই
সব দিয়ে যাব।
সুগন্ধী
——–
পাঁজর বিছানায় শুয়ে ঘুম
দাম্পত্যে দু’জন সাজানো –
কাঠের তিতির বনস্পতি কবে?
সেই শুধু কবিতা হয়ে এল;
কুয়াশা-শহর আবৃত সুগন্ধী
একা প্রতিদিন মরে যাবে!
বনে
—-
বাঘ থাকে মনে,
মেঘ উঠোনে
লতানো অস্থিরতা
কাঁপে হাওয়াঘরে
চল, বেড়াতে যাই চল;
ঝুমুর হয়ে পথ
আদুরে নথ-
বালিকা শ্লথ,
বাঘ দেখা হোক
আনখ
মৃদু-দক্ষিণ বনে।
স্বতন্ত্র
——-
ক্লান্তির পিঠে চড়ে বাঘ
বাঘের পিঠে শিকারী
অস্থিরতা, বুঝেসুঝে নাও –
স্বতন্ত্র, অস্যার্থ গোপনীয়
অংশবিহীন দিন শেষ হল।
তিনসত্যি
————
একলাটে ঠান্ডা বিধুর সন্ধের মলাটে
বসে আছি নিরুপায়,
ঘোড়াটির কাছে ঝিল হয়ে গেছি
সুখের সারস বাঁকিয়ে ঘাড়
ওইপারে গেছে লম্বা পা’য়,
ঘোড়াটির মাথা নত এই দিনলিপি –
কিছুই বলার নেই
ছিলনার ভাষা শিখে নিচ্ছি অবিরল
আত্মজীবনি বলতে তোমরা হারিয়ে দিলে
লিখে দাঁড়ি দিয়ে যাব,
তবু খুব ভালবেসে যাব
সত্যি সত্যি সত্যি
তিনসত্যি,
তোমাকেই ভালবেসে যাব।
কৃষিকাজ
———–
দেড় ইঞ্চি জমি
চাষবাস করি,
তুমি ওড়াও পাল
আমি হাল ধরি;
বাহিরঘরে বাস
বছরভর ত্রাস,
ভিতরসেঁচা জল
করছে টলমল,
গহন-গভীর ঘরে
আরাম করে মরে –
হৃদয়বসতবাড়ি
শক্ত করে গড়ি।