#
অক্ষর কেমন অবয়ব পেয়ে গেল আজ!
একটা গল্পের মতন, না?
তুমি খুব ভাল লেখ
তুমি বড় প্রিয় লেখাটি…
শ্মশান
____
অনন্ত নাভি জ্বলছে
মাটি চাপা দাও
সম্পর্ক সুতো খুলছে
ও অনুদ্বিগ্ন-কে পোড়াও,
যখনই শ্মশানে যাই
এ হাত আগুণ দেয়
এ মুখ পোড়ে
এ পাশ অতীতে খায়
ও পাশে ভবিষ্যৎ ওড়ে,
মৃত্যু যে সখা, যে ভদ্রলোক
আশেপাশে ছায়া অথবা
তোমার গানের ধুনে শোক
বিলম্বিত, ত্রিতাল-কাহারবা
যখনই শ্মশানে আসি-
পাশে তার বসেছি একাকী,
কুশল-মঙ্গল জেনে হাসি
বলি ‘মদ সিগারেট ছাড়বো, নাকি’?
সে শুধু দুপুর হয়ে থাকে চৈত্র;
অনন্ত নাভিটি জ্বলে দেহদের,
মাটি লেপে তোমার শরীরে পবিত্র
ফিরি, কিছু মাত্র বাকী মেয়াদের!
অভ্যাস
____
আগের দিনের মদ খাওয়া ভুলে যেতে
পরের দিন মদ খেতে হয়
সন্ধা হয়, বন্ধ্যা হয়
পিওন ভুলে যায় প্রেমের চিঠি দিতে
কবে যেন মেরেছো বলে প্রতিদিন
কী আশ্চর্য্য মরে যেতে হয়,
আজন্মের দেশকেও বিদেশ বলতে হয়…
ফেরত
___
হাঁটার আঙুল ধরে বয়স এসেছে,
আজ, কাল বা পরশু
ফেরত দিও আমাকে-
বহুদিন তোমার কাছে রেখে
ভুলেই গেছি
আমি কেমন দেখতে,
আরো বুড়ো হলে এরপরে
চিনতেই পারবো না…
যে দরিদ্র মাছ উজ্জ্বল নীল হয়ে ওঠে
(১)
বাজারের কথাবার্তা মর্স কোডের আড়ালে
শঙ্খিনীর আঙুলে চাঁপা রঙ-
দশমহাবিদ্যা প্রথমাবধি অবরোহ-আরোহ;
মাছ, ভণিতাখানি খুলে পড়ো
লিপ্ততাকে আকাশ ও রহস্য দুজনে
এমতকে অবকাশ বলা বিধিসম্মত…
ছ’ফুটের শয্যা কখনো পোড়ে
কখনো মাটিচাপা দেয় উন্মাদের জ্যোৎস্না
(২)
আইভান, আইভান
প্যালাজ্জো আর শাতোর মধ্যে
৩৬০ ডিগ্রী হয়েই বরফ বহুলতা
ও মহাদেশ ঢাকছে,
দেখ আমাদের মিষ্টি মাছটি
অ্যাকুয়ারিয়ামকে সমুদ্র মেনেছে,
মহাসমুদ্র তোমরা মাছঘর করলে
পাইরেট পতাকাগুলো
আজকাল গুপ্ত কিছুতে না…
এবং লালকেল্লাতে ভুত থাকে
(৩)
রান্নাঘর থেকে যে পা দু’খানি
বেড়ানোর প্রস্তাবে
এক কথায় বাজারের থলি রেখে
উড়ে যেত জল-স্থলের সীমা বরাবর
সেই মা, মৃন্ময়ী
দুধের সঙ্গে ভ্রমণ খাইয়েছে
যে ভালবাসবো বলে
যজ্ঞিডুমুরের নীচে
পুরোহিত রেখে
চলে গেল গ্রামান্তরে,
পেয়ে গেলে আর চাইতে শেখেনি
সেই নারী ভাতের আগে দিয়েছে মদ
ভ্রাম্যমাণ মদ্যপের ইতস্তত বমন
প্রাগৈতিহাসিক থেকে নিওলিব্যার্যাল
এ পাশে পড়লে ভূগোল
ও পাশে ইতিহাস- বলেন পদার্থবিদ
আমি জানি ব্রহ্মাণ্ড ব্যাথার জন্ম এক
(৪)
এই তো ফুটিয়েছিলাম সদ্য
চল্লিশ পাতার পদ্য
চায়ের জলের ঠিসারায়,
দোপাটি, অপরাজিতা
এ সমস্ত প্রাথমিক পাঠ
ভাল দোকানদার ইদানীং মসনদে
শখেরবাজারে শুধু ভিক্ষুক
আলু ও ঝিঙে বেচে
অনুষ্ঠানের গোলাপফুল জামাইবাবুরা…
(৫)
সৌন্দর্য্য যে রাইকে ফুসলে ঈশ্বর্য্য করলে
তার মাথার দিব্যি
তোমার বিছানায় কে ছিল আমি দেখিনি!
পটেশ্বরী, নির্ভুল জেনো মাছের আঁশ দেখে
কেটে গিয়েছে আমার জীবন
আলো ঠিকরোতে দেখে
ভুলেছি দরদাম
তরতাজা অন্ধকার দেখলে কনুই মারার শিল্প
বৌদি ও দেবররা জানে
আমি শুধু ভালবাসতে জেনেছি
বিছানায় ছায়া থাক
আমার কী আসে যায়!
মিথ্যে বলছো বলে
গাল ফুলিয়ে অ্যান্ড্রোমিডায় যাব
এমন জাহাজ
কলোরাডো থেকে কেপ হর্ন পেয়েছে
আমি তো বাবাকে দেখি শুধু
জানলার পাশে খবরের কাগজে
নাতনির প্রবাসে যাওয়া পড়েন
যতটা পারি আলো হয়ে
আছড়ে পড়ি সেই ঘরে
যেখানে সমস্ত জ্ঞানী গ্রন্থ
কালো অক্ষর ও কাল খসিয়ে
সাদা দেওয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে…
(৬)
নীল হে উজ্জ্বল মাছ বর্তুল ভুবনে
মেয়েটিকে মিথ্যে বলিনি
তুমিই শুধু জান,
কুষ্ঠরোগ সকলের বামদিকে আছে
ডান হাতে তাই হাত খসে যায়
এ দারিদ্র্যে লজ্জা লাগে
যাকে সে বাড়ি রেখে এলাম
রাত্রের বাইকে
সে আমাকে চেনে না
কথা আর কথা দিয়ে
সূর্যের আরোগ্যক্ষমতা না জেনে
অন্ধ হয়েছে বালিকা
কুষ্ঠ হবে না এই অভিশাপ
হে মাছ, তোমারই মতন
আমাকেও করেছে একাকী!
অংশত মেঘ, ঘনিষ্ঠ হাওয়া
(১)
যাদু বলো ক্ষমতা বলো সকলেই
বিশ্বাস ও ঠকানো নির্ভর,
প্রতিটি নির্বাচন এলে
আমি দেখি মন্দির ও দেবতার উত্থান
কোণার্কের সৃষ্টি, ধ্বংস ও পুনঃসৃজন-
বাতাসের গায়ে যে বালিকা
আঙুল বুলোলো
তার ছবি হয়েই ফুরিয়ে গেছে
সে কখনো অমরত্ব চায়নি!
(২)
এবারে নানা রকম আবহাওয়া
কাউকেই চেনা ঋতুনাম দেওয়া যায়নি;
কমলালেবু অথবা সয়াবিন
নির্ধারিত সূচীর অপেক্ষায়
গমের, যবের, ধানের লাইনে
হেনস্থার একশেষ হয়েছে-
কেউ ফুটে ওঠেনি
মাটি সব মহাশূন্যগর্ভা
এবারে নানারকম আবহাওয়ায়
কারো কোনো যুক্তি ছিল না
মুক্তি ছিল না…
(৩)
অনেকান্ত দোষ ঘটে মেঘের শরীরে
জল খসে পড়ে বিরতির আগে
ফলাহীন বর্শার তাঁবেদারী
থেকে থেকে পশ্চিমা বাতাসকে সেলাম,
পূর্বজকে প্রণাম বলতে বলতে
ধুতরো খোসায় গা ডলার আগে
নিমের দাঁতনে মাজার পরে
নানাবিধ রীতি ও রেওয়াজ
শ্রুতি হয়ে প্যাপিরাসে বেদ;
জানি, বললে অনেকের জ্বলে উঠবে
তবু আমি তো দেখেছি বেশীরভাগ
ভ্রুণহত্যার সমর্থক সব সময়
জরিবুটি দিয়ে আদর্শ হত্যা করে গর্ভে
বড় হলে কেউ যেন কোনো সত্য না হয়ে ওঠে…
(৪)
রাতের রূপতত্ত্ব গূঢ়, জেনে গেলে
মণীষার বাম মুখে ছায়া পড়ে
ব্যাথার অশুচী শবর
পারাপার করে চলে নদী
এপাশে বোধ ওপাশে অনাদি
(৫)
শ্রমণের উদাসীন দেবী
ট্রেনে ট্রেনে সাধ না মিটিলো
কখনো অন্ধ, কখনো বোষ্টমী
বার বার কেন নেমে যাও
অচেনা স্টেশনে?
আমি পা দিলেই দেশ দেশ থাকে না
গ্রাম-গঞ্জে মাটি ফুঁড়ে
জেগে ওঠে ভিডিও-শহর ত্রিমাত্রিক?
তোমার খঞ্জনী থেকে অলক্ত বিকেল
মধুমাস, মাধুকরী উড়ে গেল-
দায়রা সোপর্দে ছিল
বমন, আচমন, কৃপণ শিল্প
যা শুধু আর্থিক,
নিঃস্ব তবু তোমাকেই বেসেছি ভাল,
চতুর্থ-মাত্রা ডাউন ট্রেনে গেল
আপ ট্রেনে এলো একলা ফাল্গুন,
যেখানে রইলাম পড়ে
সেই স্টেশন মহেঞ্জোদাঢ়ো!
(৬)
সকালে ফোন আসে শ্বাশুড়ির
সন্তান নেবে না কী এবারেও!
নাতনি না নাতি পেলে
ঘোড়া সাজবেন
ছড়া কাটবেন
ছুঁয়ে থাকবেন উষ্ণ জীবন;
গত পরশু মা বলছিলেন
দুই বান্ধবী কলেজ থেকে বেরিয়ে
স্ট্যাটিসটিক্স-এর ফর্ম নিতে
ইনস্টিটিউটের সামনে দেখেছিলেন
থোকা থোকা রক্তের আঁচড়
অয়েলের ক্যানভাসে টাটকা
ঠেলাগাড়িতে স্তুপ যুবকেরা
চলে যাচ্ছে গঙ্গায়, ম্যানহোলে
বনে-বাদাড়ে
দারোয়ান বলেছিল, উন্মাদ মেয়েরা
এই দিন কলেজে আসতে হয়?
পা গুলো আটকে গেছিল ফুটপাথে,
দুটো বেণী দোলানো মেয়ে
খুব ভয় পেয়েছিল
ভয় বয়েছে পরশু অবধিও-
হাতের আঙুলে শুকিয়েছে দুপুরের ভাত
কড়কড়ে ক্লান্ত আঙুল চুপ করে গিয়েছে শেষে
সন্তান নিয়েছিলাম আমরা কাকিমা,
ফোন রেখে দিলে বলি-
এখন তো মদের বোতল,
ছেঁড়া স্কার্ট, গুমটিতে থেঁতলানো দেহ,
কর্পোরেটে বীভৎস উন্নতি,
এরা সব প্রকল্প মাত্র
শিফটের সম্পর্ক সব
আমাদের সন্তানেরা মরেছে গৃহযুদ্ধে
মরে গিয়েছে বরানগর গণহত্যায়