উৎসর্গ
——-
ক্রান্তিকালে যে জাদুকর বসেছিল দাঁড়ে
বেচেছিল মাদুলির বিশ্বাস, কবচের হাড়ে
ধর্মক্ষেত্র থেকে একটি জ্যামিতি গড়ে উঠতে গিয়ে হেঁটে গেলো সেই সন্ধ্যার দিকে, অস্যার্থে সুর্যাস্ত হল, পৌত্তলিক-অপৌত্তলিক সকলে গড়েছে মূর্তি মাটিতে-কল্পনায়! যে জাহাজকে বন্দর দিয়েছি আমরা সে বাণিজ্যে দিয়েছে কাঁটাতার-দেশ, ফুলপ্যান্ট, ওয়েস্ট কোট। যাত্রাপথে কোটি কোটি হাড় দেশ-দেশান্তরে নাচছে ভুতের নৃত্য। এক অসম্ভব সন্ধ্যা হয়েছে কুরুক্ষেত্রে।
১
বীণাবাদিনী
ওই কুচযুগ দুই হাতে মেপেছি, নিতম্বে বেজেছে বীণা, অহিফেন উড়ে গেছে কলকাতা থেকে সাংহাই! বীণাবাদিনী, লিঙ্গাঘাতে কামোন্মত্তা, পয়োধরে এত বিষ-ও ধর!
কি জন্ম দেবে শালুকফুল, কি জন্ম নেবে শালুকফুল- দুপুরের পরে বালিহাঁস উড়ে গেলে অক্ষরের মূর্চ্ছনা থেকে পদ্মাবতী? মাস্তুলে মাস্তুলে মেঘ ছেঁড়াখোঁড়া, পোড়ো বাড়িটি চার্ণকের জীবাশ্ম নিয়ে অতিঢেউ স্মৃতি থেকে অবিনশ্বর তুলে আনে দাসত্ব, জাহাজ বয়ে নিয়ে গেছে তারে ইষ্ট ইন্ডিজের ঘাটে; দুলেছে হারটি প্রিয় কন্ঠে তোমার, আমার আলম্ব বিষ নীলাভ বিদ্যুৎ থুতু ছিটকোয় সভ্যতার দিকে- বার্বাডোজ, খিদিরপুরের ডক মুখোমুখি ট্রায়াঙ্গেল এঁকেছে বারমুডার, ইতিহাস ডুবিয়াছে সরস্বতী নদীটির জলে
২
এনকোর এনকোর
রব ওঠে নিয়তির সাথে নাচাকোঁদায়, দিল্লীর মধ্যরাত্রে পার্লামেন্টে। লাখনৌভি মুজরার পরে তিরিশ ফুটের জমিদার হতচ্ছিন্ন দারিদ্র, আয়না সম্বল করে মার্বেল সিঁড়িগণ গড়াগড়ি খায়, জলপিপিদের দেশে ঘেঁটুফুল ছাতারের পাশে শুয়ে থাকে মধ্যরাত্রে। স্বাধীনতা আসে। বড়বাজারের গদি থেকে কুমুদিনির সাহিত্য-সিন্দুরে শারদীয় বেচা ও কেনা মাথা তুলে শহীদমিনারের চেয়ে বড় হয়, শূণ্য এক দেশের ল্যাটিচুড-ল্যাঙ্গিচ্যুড কর্কটক্রান্তি বিদ্ধ করে ছায়া হয়ে ভেসে থাকে মহাজাগতিক; রাষ্ট্রপুঞ্জ নক্ষত্রগণনে মন দেয় তাঁতিদের আঙুল কাটার তীব্র নিন্দা করে, রেশমের দিন চলে গেলে সম্মেলনে রেশমের স্মরণসভাটি জমকালো হয়, ভাল হয়।
৩
ব্যাক্তিগত
কে? কড়াটি দরজা সমেত বেড়াতে গিয়েছে বলে আমাদের দাম্পত্য দেওয়ালবিহীন, এই বেলা কে এল? পুঁটিমাছ, খলবলে সাদা আতপ্ত ভাত- ধবল গাভিটির সুখ ছেড়ে বহুকাল তামাদি দলিল দস্তাবেজে নিযুক্ত থেকেছি সারা রাত। মশারির আশেপাশে টিকটিকি, মশা, পোকাদের দৈনিকে আমাদের অভ্যস্ততা গদ্য লিখেছে। আরশোলা মানুষের চেয়েও বড় বয়সে, কি সাঙ্ঘাতিক বেঁচে থাকা জানে। উহাকে নোবেল দিলে সাহিত্য মুন্সী অপরাধ নেবেন না। রতি শেষে পরাজয় থাকে ধৃতিমান, উচ্চাকাঙ্খা তবু মাঝে ও মধ্যে দেখা দিয়ে যায়। দাম্পত্য বই-এর মলাটঅক্ষয়ে বেড়ে ওঠে নেতির দিকে, অস্তিতে চারুবাসনাসমূহ গ্রীবা তুলে থাকে যেন বাঁকুড়ার ঘোড়া।
৪
কষ্ট
একটা গন্ধের মতন মাথায় ঢুকে পড়িস! কি মাখিস তুই মুখপুড়ি? বুকের মধ্যে মুখ দিলেই দম বন্ধ হয়ে আসে। আমার কষ্ট হয়। মরে যেতে সাধ হয়। হৃদয়ের কথা পেতলের বোতামের মত গলাবন্ধ কোটে বসিয়ে সুসভ্য হয়ে যেতে ভয় হয়। বেদনা অশেষ সভ্যতা জেনেছে পুঁথি-পত্রের ভিড়ে , বিকেলের পর থেকে প্রকৃত আলো নেই বই পড়বার। নারী বর্ণময় উপলের দেশ ছেড়ে চলে গেলে পরে, চা-দোকানের বিমর্ষ নিত্যতায় অভিব্যাক্তি পরে থাকে যথাযথ প্রেমের- বিস্কুটের বয়ামে বয়ামে। মিশকিন, গ্লাসনস্ত-পেরেস্ত্রৈকার পরেও কি সদুত্তর এলো? এখন মাফিয়া-কন্টকিত গণতন্ত্র, এখন বেশ্যাপানা দিনদাহাড়ে, মার্লবোরো আর হার্লে-ডাভিডসন সংসদে সিনেমাটিক ক্যাবারে করে, ভিরিদিয়ানার মত মিশকিন তুমি কবে পলিগ্যামাস হবে? নৈতিকতার কোঁচকানো ঘেমো জামাটি যে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে তাতে মিশকিন তোর বুক থেকে আমি কোনোদিন মুখ সরাবো না; ভিখারীবর্গের আসন্ন ‘দ্য লাস্ট সাপারে’ আপনাকে উষ্ণ আমন্ত্রণ।
৫
বেনে বৌ
হলুদে কালোর ছোপ, ঠোঁটে পান, পাখিটি আকাশে উড্ডিয়মান। আকাশ বলতে জাদুকর তুমি যে উচ্চাশা বুনেছিলে তার সন্দর্ভ কিছু, অথবা কুয়াশা খুব অর্থ। আকাশের অন্যান্য মানে হয়তো কিছু বা আছে প্রবন্ধ সংকলনে, কিছু আছে শিবালিক পার্বত্য বিস্তারে, কিছু মানে বহুদিন ময়দানে ঘুমাতেছে। সেখানে বিজয় কামান কিছু আরো, ছাব্বিশে প্রবল জনতন্ত্র হয়। ঘোড়াগুলি অবিরল জ্যোৎস্নায় মরন্ত রাতের প্রচ্ছদে লেজ নেড়ে নেড়ে, সন্তপ্ত সোনাটা ঘাসে শিশিরের প্রত্যাশিত পতনে বেজে উঠলে পরে, পুলিশের কালো গাড়ি আর প্রজাতান্ত্রিক এনকাউন্টার দেখে শিখে তোমারই ইশারায় রাত সম্পর্কে নীরব। তার চোখে ঠুলি, চিরকাল দেখে যাচ্ছে প্রতিফলিত আকাশ তৃষ্ণার জলে। পাত্র শূণ্য হলে আকাশ-ও উধাও। অথচ ঘোড়াগুলি ফিকশনে অল্টার-ইগো আঁকে। আর আমি যতবার বেনে বৌ, কৃষ্ণ কোথা পাখি নিয়ে লিখি, সে সব বারতা ক্রমে ঘোড়া-বিষয়ক দুই চার কথা হয়ে ওঠে…
৫
ছায়াযুদ্ধ
বালিশে বালিশে যুদ্ধ হয়, যুযুধান তুলো উড়ে যায় পরম ভোরের দিকে; আমাদের ঘুম স্বল্পস্থায়ী হয় সন্দিগ্ধ রমণের পরে। ঘুম থেকে উঠে রাতরমণীর চলে যাওয়াটুকু চোখে লেগে থাকে, তাহাকে কতবার দেখিয়াছি কৃষ্ণভামিনী, অনুচ্চকিত ওই চলে যাওয়ায়। বড় পিঙ্গল হয় এরপরে দিন। মোরগের অনীর্ষণীয় ঝুঁটি দুলে দুলে নামতার চালে দিন খুঁটে খায়। সম্ভাব্য সমস্ত সম্পাদ্য গ্রথিত পূনঃপৌনিকতায়, তাই আমাদের দুঃখ নেই, হতাশার মাইম মঞ্চে মঞ্চে, দূর থেকে কমেডির মত লাগে- যারা সব হেঁটে গেল স্বার্থকতা পথে, তাদের খোলস লেপ্টে বালিশে, তুলোতে দীর্ঘনিঃশ্বাস লেগে ভিজে ওঠে ওড়া। হৃদয়, হৃদয়, আমাদের দুঃখ নেই, প্রতিক্রিয়া ছায়াযুদ্ধে নিহীত সুমেরু, কৃষিকাজ ভুলেছে প্রণয়।
৬
জাদুকর
ঠিক সাদা দিয়ে তোমাকে আঁকা চলে না সাদায়, অথচ কি শ্বেত তুমি, শুভ্র দেবীটির তুমি যেন দেব। আহিরীটোলার থেকে যেই ঘাট বজরার ভারে ভারে বিপর্যস্ত, যেই পথ কিং জর্জের দরবারে, যেই পথ সিন্ধুসারস চেনে, সেই পথে তোমার প্রত্যহ। কয়েক কোটি মানুষের দাঙ্গা ও মড়কের মৃত্যু যে কোল্যাটারাল ড্যামেজ তাই দিয়ে ব্যাখ্যা চলে না তোমার ট্রিকারির। তুমি এক শিকারীর হাতের আঙুল যার ট্রিগারের চাপ মুহুর্তের ভগ্নাংশের মধ্যে পশ্য ও অস্পষ্ট, তুমি অর্চিস্মান আমাদের স্বাধীনতা-সাধ।
কিশোর বাথরুম-রতি যে তন্ময়তা তার কাছাকাছি তোমার টুপির পালক ওড়ে, হে মগ্ন, চৈতন্যের অতলে তুমি আমাদের আজব নাটুয়া। পরম হংসের মত তুমি জল থেকে নিয়ে গেছ দুধ, আমাদের জল থৈ থৈ গেরস্থালি, এইদিকে বেনাচিতি ওই দিকে ওয়াঘা বর্ডার।
[সিরিজটি চলছে]