১
এ নগ্ন রাতের পা ঢাকা চাদর
অপরূপ ভোর মুড়েছে আদর,
আড়মোড়া ভাঙে, হালকা হাসিটি
বুকের গভীরে ঐ বাঁশের বাঁশিটি,
ওঠো মায়া, প্রীতকেলি আলোকহরিণী
নিশি গেল, আমাদের দিন বিনোদিনী।
২
বলেছিলে ছুটি দেবে বুকের মধ্যে ঢেকে
আশায় আশায় বছর কয়েক গেলো
বৃথাই বেলায় মেঘ উঠছে ডেকে
৩
যে নদী অন্য দেশে যায়
সে আমার কেউ নয়
যে ফুলের অন্য ভ্রমর আছে
আমি যাই না তার কাছে …
৪
চাঁদ কপালে খর নদীর ধারে
.
ডুবিয়েছিলে
ফেরোনি উদ্ধারে
৫
পেতেছি হাত, বসেছি হাঁটু গেড়ে
জীবন দেবে,
মাধুকরী,
দামাল বৃষ্টি ভরে?
হালকা মেঘে মন ভরে না
তুমুল মৃত্যু চাই
খুচরো নয়, শ্রাবণ-মেয়ে
দিও সমস্তটাই;
পেতেছি হাত, বসেছি হাঁটু গেড়ে
জীবন নেবে,
মধু-হ্লাদিণী,
মিঞা মল্লার জুড়ে?
৬
ওই ডাগর বুকে কলঙ্ক-তিল ভাল
ঠোঁটের ছোঁয়ায় টান, বসুধা টলোমলো
সুধার ঘরে চোর, একান্ন-বিষ জাগে
আলো কালোয় বঁধু, অঘোর শঙ্খ লাগে।।
৭
কপালজুড়ে টিপ পড়েছ গোল
চাঁদের মত আলো ছড়াও হেসে
অবকাশে আমার দেশেও এসো
তোমার সঙ্গে চাইছি যেতে ভেসে …
বোতাম
——–
বোতামে সব ছিল, জামা ছিল না
ত্রয়োদশীর ঘরে বারুণী ব্রত
স্নানে আজ হবে না তবুও,
মৃতের জন্ম নিয়ে আলো আসে
রুগ্ন ও বিক্ষত ঢেউ
নক্ষত্রের জন্ম
জ্যোতিষ্ক মৃত্যুতে;
আঁচে আঁচে মাছি বসে
যদিও গন্ধে পূর্বাপর লেখা
কুকুরের লোভ
অনুজ্জ্বল মুখে সাতটি মুখোশ
জামার অভাবে ঢাকা গেল না দৈন্য তার
গাধাদের ভীড়ে ঐ কোলাহল হবে
মানুষ সাজবে কতক
যারা সব আদতে বোতাম।
রডোডেনড্রন
—————
ঘন পাইনের বন থেকে কুয়াশা মুছে নিচ্ছিলাম তোমার আঁচলে
টানা উঠে যাওয়া পথ নেমে যেতে পারে, ঠিক তার আগে
ধ্বস নেমে এল, অতর্কিত খাদেরা যেমন লাফিয়ে ওঠে
সংসা্র সম্পর্কে, মুদির দোকান পেরিয়েই ডান গলিটায়
অন্ধকার ঝপ করে মুড়ি দেয় লোকগুলো, অবসরপ্রাপ্ত
ধ্বসে মুছে যায় –
যেন ছিল এই মাত্র, আর নেই এই যাতায়াত
লিখে রাখি সেই কথা যত
রডোডেনড্রন যা পড়তে চেয়েছে
কাল তার ফুটে ওঠার দিন
সময়
——
এত তাড়াতাড়ি এত দেরী হয়ে গেল?
সমস্ত ছবি ভেঙে পড়ল ঘড়িদের দেশে
অযথা নীল লেগে আছে রুকস্যাকে
ওষুধে সুখ পেয়েছে, অসুখ সারেনি;
ডিসেম্বর, তারাদের শীত ক্রমে না এসে
বিখ্যাত জুলাই দেখা দিল এইভাবে?
এত তাড়াতাড়ি এত দেরী হয়ে গেল
গল্প সমগ্র হল না
ফুরোলো না স্বল্পের বিরতি
হাসপাতাল/১
—————-
সাদা রঙের ভেতর আশ্বাস থাকে এবং হাসপাতাল আমাকে ভালবাসে। এ সব কথা পাহাড়ে বলে দেখেছি ধ্বস নামে। রবিবারের হাসপাতাল একটি ছুটির দিনের হয়। ছুটির দিনেও বিষণ্ণ নার্সদের মেঘ মনে হয়। ডাক্তারেরা বৃষ্টির মত আসে না, আসে না, আসে না। ভ্যাপসা হয়ে থাকে সৌরমন্ডল। শ্রাবণের অসুখের চিকিৎসা ভেঙে উঠে আসে গ্রীষ্মের স্মৃতি।
জলে যাচ্ছে যাক
——————-
জলে যাচ্ছে যাক
জলের কাছেই থাক
আঙুল ফেরা বৃষ্টি আমার
পুড়েই হোক খাক
জন্মে বাজে বিষদুপুর
অলককেলি ভুলনুপুর
আলগা মেঘে ঘোর মল্লার
স্তব্ধ হয়ে থাক
জলে ঘূর্ণি পাক
ভুলের কাছেই থাক
স্রোতস্বিনী সেই সোনাটার
নামও মুছে যাক।
একতলা বাড়ি
—————–
ছ’বছর পর তার একতলা বাড়ি
সৌধ-মিনার ঢাকা তেইশ মেঘের আড়ে
সমান্তরাল উঠে যাচ্ছে পথ ও পৌঁছোনোর ধারণা
কতবার ভেবেছি এবারে পৌঁছলাম –
কালো খুলে গেলে দরজার অবিশ্বাস নিয়ে
দারোয়ান খোঁজ নিয়ে গেছে
ও কার চাকার দাগ
ও কেন চাকার দাগ?
যথারীতি সমুদ্রেও ছিল গোয়েন্দা তদন্ত
উপন্যাসে এ চরিত্র আমন্ত্রিত নয়
নায়ক নায়িকা ঠিক, রোম্যান্টিক কমেডি
সেখানে প্রহসন সুউচ্চ ঢেউ-এ?
সাত বছর পর তার একতলা বাড়ি
বৃষ্টি পড়লে তিক্ততা বাড়ে
উনপঞ্চাশ হাওয়ায় নষ্ট ভাসে মেঘ
তীব্র রান্নার গন্ধে নাচে প্রেমিকেরা।
লোকটির সন্ন্যাসী জামায়
——————————
স্মৃতিদিন আনো তুমি, সংকীর্তণ
ঝরে যাচ্ছ বৃষ্টিতে নিভৃত
আবার শ্রাবণ হল, শান্তিনিকেতন
ঢের রইলো ভুল আবৃত;
নাম ধরে ডাকে আকাশে বিদ্যুল্লেখা
পথে ঝরে অমলতাস
ফিরবে না তুমি, পলাতকা?
শাল্মলী এলানো বাতাস;
বহুল গৈরিক ওড়ে রক্তকঙ্কর ভিজে
লোকটির সন্ন্যাসী জামায়
বিষাদে নামালো ঝড় গাছেদের মাথা
যাবে যে, কে তাকে থামায়!
সাপ, নেউল, কার্ভালহো
—————————–
১
সাপ নেউলের যথোপযুক্ত সম্পর্কে
ঝুলন্ত ব্রীজ বা তথাকথিত ব্রা টাঙানো
নীচ থেকে নদী ছোবল মারে –
রাস্তার নাম অস্থিরতা
২
সুপক্ক স্তন ফলে আছে হরিৎ বাজারে
থলের সাইজে খিদে লেখা
পানমুখে বেশ্যার রামায়ণ-পাঠ
শুদ্ধস্বরে একটি রিভলভার দমনাঙ্ক কষে
৩
ট্রিগার টানার পর ছায়া রেখে যেও না কার্ভালহো
চুম্বনরত ছেনালি জাহাজ ও উপনিবেশ
চিররৌদ্রে সোনালি মাছিটি মরীয়া
কেউ তার সাঁতার দেখছে না
চোরবাগান ও ধুসর কবিতাবলী
————————————-
১
ব্যক্তিগত হাঁস ও উদাসী বাগানের সমন্বয়
ব্যাকড্রপে অধৃত দুর্ভিক্ষ বেয়াল্লিশ মন্ময়,
কিছু জানে লাউডগা সাপ, পারুল বৌদি
কল থেকে আনন্দ ফিরে যায়
জাগরণে বিভাবরী
লন্ঠন ছিল প্রয়োজন
পুকুরের থার্মোডায়ানমিক্সকে প্রেম
দু হাজার পনেরোই ছাপ দিতে পারে।
২
ছায়া মাখা থাকে পা-এর থইথই কিনারে
যেহেতু অন্যমনস্ক
চাঁদ ঝুলে পরে রাতের ওদিকে
জারুল শাখা,
কুড়াল মেঘ
অবশিষ্টের কাছাকাছি বসে
দু-চারটানে উড়ে যায়
চোর ওঠে
দুধের সরের মত হাত
মন নিয়ে যায়
কালার মাখন
ক্ষমা করার সময়
——————–
এক একবার রাস্তার দিকে দেখি, উচ্চারণ লিখি
নারী, মিছিল, গেরস্থালি, জঙ্গল – প্রাপ্তি ও বিবক্ষা
আসে – চলে যায় নিকট রোদে দূর শীতে ম্রিয়মাণ
টিকিট স্থান-কালের ক্রমাঙ্ক, যাত্রা স্মৃতিকথামালা
ছাতিমের গন্ধকে ক্ষমা করার সময় এসেছে
প্রকৃতির ঔদাস্য ব্যয়ে ও অপচয়ে অসন্তপ্ত
প্রকৃত উদাসীন ধুলো হয়ে আলগা যাওয়ায়
ছবি সব পুড়ে যাবে ত্রাণের ভূমিকায়, তর্পণে
হাতে আসে সব, হাত ফেলে দেয় অচিরাৎ
দুলে ওঠে আড়ালের ঘড়ি যেই, স্টেশনের
এক একবার যাত্রার দিকে দেখি, লিখি না
পা চায় না উদ্দীপন, সন্দীপন বোধ জুড়ে থাকে
তুমি নও, আর কেউ
———————-
রাতের ট্রেন থেকে দূরত্ব বাড়তে বাড়তে এখন জলঘড়ি
জান ক’টা হাড় পাঁজরে বাজাই দিনরাত একতারা?
তুমি কিছুই জান না যার নিহিতে ধর্মমঙ্গল এবং ছুটি;
সাঁতারের পাড় থেকে নদী চলে যায় সার্কাসে খাটতে
মাছরাঙার শোকে নেলপালিশ পরে তোমার বাজার
কী অখাদ্য লাগে আজকাল তোমাকে বোঝানো যাবে না!
নির্জনতা গুঞ্জাফুলের মালা সুকেশীর, তুমি নও, আর কেউ ছিল
রবর্ণের বেঁচে থাকা
———————-
১
স্বরবর্ণের বেঁচে থাকা এই, স্বতন্ত্র এবং জুড়ে থাকা ব্যঞ্জনের উচ্চারণে
অথচ কারো নয়, ছায়া নিয়ে থাকে দিনের ভেতর, পূর্ণতা পায় বুঝি?
একদা মৃত্যুই ভাল, পেঁচার উড়নকালে ইঁদুরের তুমুল হাহাকার যেই
ডানা থেকে সুস্বাদ গড়িয়ে, যব ধান গম ধাবন খেতের বিপন্নতা
ঢেউ হয়ে ফসল অভিপ্সাক্লান্ত, ঘেমো কুঞ্চনের আর্দ্রতায় কী বিথর
এই জীবন! এই জীবন? স্বরটি সুরে লেগেছে কি মায়াময়, খরখরে
সিগারেট মুখর কন্ঠে? বিধুরতা কানে লেগে থাকে, মরামর চাঁদ
মশারির চালে রঙ করে হিমেল সাদাটে, কাল রাতে, আজ-ও রাত্রে।
২
বাংলার নমস্য গালে চুমু খাই, তরুলতা দুপুরের কলে স্নান করে ধন্য
জীবিকাকঠিন মানুষ ওদের ভালবেসো, আমাদের মত নয় ওরা কেউ
সংসার ফেলে ঘুরে ঘুরে আসে পাঁকে, শুয়োরের খাবারের খোঁজ মেনে
আমরা রেখেছি এই করে বলে মানুষের পুত্রকন্যা, আমাদের মত নয় বলে
স্নেহ কোরো, যতটা ঘৃণা আমাদের অ্যাকাউন্টে, স্নানটি মমতায় মুড়ো
মাসে মাসে টাকা পাঠানোর চূড়ান্ত অ্যাবস্ট্রাক্টে ওরা বেঁচেছে সঘন ভাষায়
আমি যার শস্য কিনি, মহাজনসম ব্যবহারে বাংলার দালালি এঁকে যাই –
এই অক্ষর, ওই অক্ষর
—————————
১
অন্ধকার এনেছি হাতে ধরে, খুব মাখবো দুই জনে
সমুদ্র নিবে যাবে তারপর,
অ্যাসিডের ঢেউ থেকে উড়ে যাবে সরমার আড়াল
আলো নেই আলো নেই
ছলনার দেশ থেকে ঘৃণিত রহস্যের ত্রিকোণ অন্দরে
শুয়ে আছে বর্তুল আয়না
নারী নয়, কোমরের নীচে রাখা আঁশ, মাছের স্বভাব।।
এই অক্ষর, ওই অক্ষর/২
—————————
৩
আহা, সে লুকোতে জানে, লুকোতে জানে
আস্তিনে সাপ,
ঘরে পাপ
৪
এর সাথে সখা খেলে, ওর সাথে ঘর
আসে আর যায় তারা
দিনরাত ভর
৫
ঘৃণা আসে, থুতু লেখা পাতায় পাতায়
চার তিন দুই এক
কাওয়ালি ফুরোয়
৬
লিখি জল, লতাপাতা অকুন্ঠ তোমায়
এলে বলে বৃষ্টি হল
ক্লেদ চলে যায়।